মানিকগঞ্জের ঘিওর- জিয়নপুর সড়কের কুস্তা বেইলী ব্রীজটি ইছামতি নদীর ভাঙনে একাংশ নদী গর্ভে চলে গেছে। ফলে ৪ দিন যাবত বন্ধ রয়েছে ঘিওর ও দৌলতপুর দুই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের হাজারো লোকজনের যাতায়াত ব্যবস্থা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সেতুটি পুণ: নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। ইছামতি নদীর ওপর নির্মিত কুস্তা এলাকায় বেইলী ব্রীজের দুই পাশের পাদদেশে ভাঙন শুরু হয় গত বুধবার বিকেলে। গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে সংযোগ সড়ক থেকে ব্রীজের মাঝে প্রায় দুই ফুট ফাঁক হয়ে পড়ে। বেইলী ব্রীজটি একপাশে কাত হয়ে রয়েছে। যে কোন সময় নদী গর্ভে ধ্বসে পড়তে পারে ব্রীজটি। বুধবার থেকে ৪ দিন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলা এলজিইডি’র আওতাধীন ১৯৯৭ সালে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কুস্তা ব্রিজটি নির্মান করা হয়। প্রধান রাস্তা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন ঘিওর ও দৌলতপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের মানুষ। কুস্তা, ভররা, বিনোদপুর, খলসী, কুমুরিয়া, নারচি, গোবর নারচি, শ্রীধরনগন, জিয়নপুর, শোলাকোড়াসহ ২০টি গ্রামের মানুষের প্রধান রাস্তা বন্ধ থাকায় পরেছেন চরম বিপাকে। ব্যবসা বানিজ্য, হাট বাজারে যাওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইছামতির ভয়াল থাবায় ল-ভ- হয়ে গেছে প্রায় দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন গরুর হাট। হাট সংলগ্ন অর্ধশত বসতবাড়িও গিলে খেয়েছে ইছামতি। এবার ভাঙনের নতুন যোগ হয়েছে এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঘিওর-গোলাপনগর রাস্তা, কুস্তা বেইলি ব্রিজ, ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্রিজ, কালভার্টসহ নদী তীরবর্তী ১৬টি গ্রাম। এ অবস্থায় ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। স্থানীয়রা জানান, কুস্তা এলাকায় কফিল উদ্দিন দর্জি উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইছামতী নদীর ওপর সেতু, কুস্তা কবরস্থান, আল আকসা জামে মসজিদ ও সার্বজনীন মহাশ্মশান ভাঙনের কবলে পড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধের ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই এসব প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে কয়েকটি পরিবার ঘর নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে। শুক্রবার দুপুরে সরজমিন দেখা যায়, অনেকের বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আসবাবপত্র, অন্যান্য সামগ্রী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙনে কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চবিদ্যালয় ও কুস্তা ব্রিজ, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, কবরস্থান, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি হুমকির মধ্যে রয়েছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে এসব স্থাপনা ও বসতবাড়ি। এ ছাড়া ইছামতি নদীর অদূরে প্রবাহিত পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, মাইলাগী, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার, উপজেলা খাদ্য গুদাম, ব্রিজসহ ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান হুমকির মধ্যে রয়েছে। কুস্তা গ্রামের মজিদ মিয়ার বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘দুটি ঘর, শৌচাগার ও গাছপালা নদীতে চলে গেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। স্থানীয় মোঃ নাজমুল হাসান বলেন, ব্রীজটির দুইপাশের পাদদেশে থেকে সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এখন এই ব্রিজ দিয়ে যোগাযোগ বন্ধ যেকোনো সময় নদী ভাঙ্গনে বৃষ্টি বিলীন হয়ে যেতে পারে। ঘিওর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম বলেন, ৫০ টন ওজনের ধারন ক্ষমতা সম্পূর্ণ ক্রেন আনা হয়েছিল কিন্তু তা দিয়ে কাজ করা সম্ভব হয়নি। পরে এলজিইডি দপ্তর থেকে নতুন করে চেইন কপ্পার মাধ্যমে পুণ:স্থাপনের কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তরা সাহায্যের পরিবর্তে ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান চান। এ বিষয়ে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ঘিওর কুস্তা বেইলি ব্রিজের গার্ডারের কাছ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় দেখতে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। দ্রুত ব্রিজটির সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। দুএক দিনের মধ্যে ব্রিজ সংস্কার কাজ শেষ হবে। ব্রিজটিকে রক্ষা করতে ইতোমধ্যে দুই পাড়ে ব্রিজের গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাঈন উদ্দিন বলেন, ইছামতি নদীটি খালের মতো সরু। এর উৎস মুখে খনন করায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। এতে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সাড়ে আট হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর বেইলী ব্রিজ রক্ষায় গাইড ওয়ালসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। পানির প্রবাহ কমে গেলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।