মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজারে পাইকারি আড়তে মরিচের দাম নেই। মরিচ তোলা এবং পরিবহন খরচ ৭ টাকা হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকায়। তাই রাগে-কষ্টে কেউ কেউ মরিচ বিক্রি না করে ফেলে দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিন না তুললে ফলন কমে যাবে বলে বাধ্য হয়ে মরিচ তুলতে হচ্ছে কৃষকদের।
সরেজমিনে গিয়ে জেলার অন্যতম বড় মরিচের পাইকারি বাজার ঝিটকাতে দেখা যায়, বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষক ঠিকমতো মরিচ তুলতে না পারলেও অল্প কিছু মরিচ নিয়ে আসছেন। সেই মরিচও দাম পাচ্ছে না তারা। অনেকে বিক্রিও করতে পারছেন না। তাই ন্যায্য মূল্য এবং ক্রেতা না পেয়ে ক্ষোভে দুঃখে অনেকে মরিচ বিক্রি না করে বাজারের পাশে ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন।
জানা যায়, এ বছর হরিরামপুরে ১২৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। উপজেলার বাল্লা, গালা আর গোপীনাথপুর ইউনিয়নে মরিচের বেশি চাষ হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নে।
উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের বাস্তা এলাকার মরিচ চাষী আজাদ জানান, ১০ বিঘা জমিতে ২ ভাই মিলে মরিচ চাষ করেছেন। মাস খানেক আগে ১২ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত মরিচ বিক্রি করলও এখন ৫ টাকা করে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাদের প্রতি কেজি মরিচ তুলতেই খরচ হচ্ছে ৫ টাকা। পরিবহন খরচ কেজি প্রতি ১ থেকে ২ টাকা। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কেজি মরিচ বিক্রি করতে পারেন তিনি।
মরিচ চাষী মতি মিয়া জানান, ২ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন তবে মরিচের দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় আছেন।
গালা ইউনিয়নের কৌড়ী গ্রামের নুরু মিয়া জানান, ৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ঝিটকা বাজারে ৯০ কেজি মরিচ এনে ৩ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন। খরচের টাকা না উঠায় কিছু ফেলে দিয়েছেন। মরিচ তুলতেই ৫ টাকা চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
পাড়াগ্রাম এলাকার কৃষক প্রদীপ সরকার জানান, সে তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছে। আজ সে মরিচ বাজারে মরিচ এনেছিলো ৪০ কেজি। যা উঠাতে ও বাজার পর্যন্ত আনতে তার খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ৭ টাকা। কিন্তু বাজারে দাম করছে কেজি প্রতি ৩ টাকা। তাই রাগে কষ্টে সে মরিচ বিক্রি না করে ফেলে দিয়েছেন। গোপীনাথপুর গ্রামের ফারুক ও ইউসুফ জানান, ৯০ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। ৬৮ কেজি মরিচ নিয়ে বাজারে এনেছেন। কেউ দাম ও জিজ্ঞেস করছেনা। মরিচ বিক্রি না হলে তিনিও ফেলে দিয়ে চলে যাবেন বলে জানান এই প্রতিবেদককে।
হরিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল গফ্ফার মুঠোফোনে জানান, এ বছর হরিরামপুরে ১২৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে। আগের চেয়ে উপজেলায় মরিচের উৎপাদন অনেকগুনে বেড়েছে। সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট এর দিকে নজর দিলে আমরা এ সমস্যা থেকে উতরাতে পারবো বলেও জানান এই কর্মকর্তা।