একদিন তো উঠে, পরদিন বিরাট পতন। তথৈবচ দেশের পুঁজিবাজার। বর্তমানে যে অবস্থা তাতে বলা যায়, দেশের পুঁজিবাজারের ওপর ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে পুঁজিবাজারে। আর তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে সূচকের উত্থান-পতনে। তবে পতনটাই বেশি।
আর সে কারণে দেশের পুঁজিবাজারে কমছে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাবের সংখ্যা।
সেন্ট্রাল ডিপজিটরি অব বাংলাদেশ (সিডিবিএল) এর তথ্যমতে, গত বছরের ব্যবধানে প্রায় আড়াই লাখ বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে গেছেন।
চলমান মন্দা ও আস্থার সঙ্কটে বিও হিসাব কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যদিও পুঁজিবাজারের সঙ্কট উত্তরণে সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপরেও আস্থা সঙ্কট রয়েছে বিনিয়োগকারী মনে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাজার সংশ্লিষ্টরা বাস্তবায়নে মনোযোগী হলে পুঁজিবাজারে ব্যাপক উন্নতি হবে।
গত বছর বেশিরভাগ সময় মন্দার মধ্যে পার করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এ বছরও প্রায় দিনই বাজারে বড় দরপতন হয়েছে। দরপতনের ধাক্কায় এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ কোটি টাকা।
এ অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এতে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও হিসাব খোলার প্রবণতাও কমেছে।
সিডিবিএল জানাচ্ছে, বিদায়ী বছর আড়াই লাখের বেশি বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়ে চলে গেছেন।
তথ্যমতে, ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী ছিল ২৭ লাখ ৭৮ হাজার ৭৯৭ জন।
২০১৯ সালের শেষ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী দাঁড়ায় ২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩০১ জনে। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাজারে বিনিয়োগকারী কমেছে ২ লাখ ৪৯৬ জন।
২৫ লাখ ৭৮ হাজার ৩০১ জন বিনিয়োগকারীর মধ্যে পুরুষ ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ১৮৭ জন।
২০১৮ সালের শেষ দিন পুরুষ বিনিয়োগকারী ছিল ২০ লাখ ২৭ হাজার ৫ জন জন। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে পুরুষ বিনিয়োগকারী কমেছে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৮ জন।
একই সময়ে নারী বিনিয়োগকারী ৫৩ হাজার ২৪৮ জন কমেছে। ২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে নারী বিনিয়োগকারী ছিল ৭ লাখ ৩৯ হাজার ২১২ জন।
২০১৯ সালের শেষ কার্যদিবসে নারী বিনিয়োগকারী দাঁড়ায় ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৯৬৪ জনে।
২০১৯ সালের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানি বিনিয়োগকারী দাঁড়ায় ১৩ হাজার ১৫০ জন।
২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে কোম্পানি বিনিয়োগকারী ছিল ১২ হাজার ৫৮০টিতে। এক বছরে কোম্পানি বিনিয়োগকারী বেড়েছে ৫৭০টি।
২০১৮ সালের শেষ কার্যদিবসে দেশি বিনিয়োগকারী ছিল ২৬ লাখ ২ হাজার ৫৫২ জন।
২০১৯ সালের শেষ কার্যদিবসে দেশি বিনিয়োগকারী দাঁড়ায় ২৪ লাখ ১৯ হাজার ৬২৮ জনে। এক বছরে দেশি বিনিয়োগকারী কমেছে ১ লাখ ৮২ লাখ ৯২৪ জন।
একই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগকারী কমেছে ১৮ হাজার ১৪২ জনে। ২০১৮ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারী ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৫ জন।
২০১৯ সালের শেষ কার্যদিবসে বিদেশি বিনিয়োগকারী দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২৩ জনে।
বিও হিসাব কমার পেছনে বাজারের মন্দা অবস্থাকেই দায়ী করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, মন্দার কারণে মুনাফা না পাওয়ায় বাজার থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বিনিয়োগকারী।
বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে তারল্য সঙ্কট দূর করার পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতের তাগিদ বিশ্লেষকদের।
পুঁজিবাজারের সঙ্কট উত্তরণে সম্প্রতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাসহ ৬টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব নির্দেশনা বাজার সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।