টুঙ্গীর তুরাগতীরে আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয়  পর্ব। ফজরের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শুরু হয়েছে।

ইজতেমা যোগ দিতে এরই মধ্যে দেশ-বিদেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাদ ফজর মুফতি শাহজাদ হোসেনের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে মূলত তিন দিনের কার্যক্রমের সূচনা ঘটে। রবিবার আখেরি মোনাজাতে শেষ হবে এবারের দুই পর্বে ছয় দিনের ইজতেমা। দ্বিতীয় পর্বের আয়োজনে রয়েছেন মাওলানা সাদ অনুসারীরা।

এর আগে আমলি শূরার তত্ত্বাবধানে মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের উদ্যোগে প্রথম পর্বের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে দুই দিন ধরে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা টঙ্গী আসছেন। তুরাগ পারের বিশাল চত্বরে নির্মিত চটের শামিয়ানায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন পুণ্যার্থীরা। আন্তর্জাতিক নিবাসে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ কক্ষে উপস্থিত হচ্ছেন। দিন-রাত বিভিন্ন আমল ও জিকির-আজকারে সময় অতিবাহিত করছেন সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। এদিকে ট্রেনের ধাক্কা ও বাধ্যর্কজনিত কারণে গত দুই দিনে ইজতেমায় আগত দুই পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে।

গতকাল বাদ ফজর থেকে বাদ মাগরিব পর্যন্ত মূল মঞ্চ থেকে আমবয়ান পেশ করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন খিত্তা ও লোকাল গেস্ট কামরায় পেশাভিত্তিক ও ছোট ছোট জামাতে খাসবয়ান অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল আমবয়ান পেশ করেন মাওলানা ইকবাল হাফিজ, ওয়াসেফুল ইসলাম ও মাওলানা মোহাম্মদ শামীম। উর্দু ভাষার মূল বয়ান তাত্ক্ষণিক বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, চীনা, ফারসি ও হিন্দি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের জন্য ইজতেমার বয়ান মঞ্চের নিচে তিন দিকে চাটাই বিছিয়ে বসার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ইজতেমার রেওয়াজ অনুসারে এবারও কাঠ, লোহার পাইপ ও চট দিয়ে অনাড়ম্বরভাবে মূল বয়ান মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে কোনো ডায়াস, ব্যানার ও অতিথিদের আসন রাখা হয়নি এবং বয়ানের আগে বক্তার নাম ও কোনো পরিচয় ঘোষণা করা হয় না। বাদ এশা ছাড়া চার নামাজের পর ছয় উছুলের আলোকে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যাসংবলিত বয়ান করা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার ইজতেমা ময়দানে প্রতিবারের মতো উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে আগের মতোই টঙ্গীর শিল্পাঞ্চল ও আবাসিক এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের বাড়িঘরে আত্মীয়-স্বজন ও মেহমানদের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে।

ইজতেমাকে উপলক্ষ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে সমবেত হচ্ছেন টঙ্গীবাসীর স্বজন-বন্ধুরা। বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা প্রতিবছর বেড়েই চলছে। এ কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৩২ জেলা করে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। বর্তমানে এ অবস্থা আর নেই। কিছু মতভেদের কারণে বাংলাদেশে তাবলিগ জামাত মাওলানা সাদ ও মাওলানা যোবায়েরপন্থী দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এরপর প্রশাসনের নির্দেশনায় গত বছর থেকে বিশ্ব ইজতেমা পৃথকভাবে দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।