আউযু বিল্লা হিমিনাশ শায়তানির রযীম। বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীমঃ
নাহমাদুহূ ওয়া নুছল্লী ওয়া নাসাল্লিমু আলা রসূলিহিল কারীম ওয়া আলা আলিহী ওয়া আছহাবিহী আজমাঈন।
সকল প্রসংসা আল্লাহ জাল্লা মাজদুহুল করীম উনার জাতে পাকে এবং অসংখ্য দূরুদ সলাত সালাম নবীয়ে আকরাম, শাফিয়ে উমাম, নবীয়ে মুহতারাম, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, ইমামুল মুরসালিন, খতামান নবীঈন, নূরাল মুজাসসাম, হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাক কদমে এই অধমের পক্ষ থেকে।
প্রথমে জেনে নেওয়া প্রয়োজন পবিত্র ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি?
ঈদ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল খুশী হওয়া বা খুশী প্রকাশ করা, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর “মীলাদুন নবী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনকে বুঝায়। ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে খুশী প্রকাশ করাকে বুঝায়। অর্থাৎ অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে, আধারের বুক চিড়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট নবী ও রসূল হুযুরপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি শান্তি নিয়ে যেদিন জমিনে এসেছিলেন মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতা ও ন্যায়ের দিক নির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করে তুলতে সেই দিনকেই পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলা হয়। আর এই নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শুভাগমনে খুশী উৎযাপন করাটাই হচ্ছে ‘ঈদে মীলাদুন নবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সূরত। যেমনঃ [ميلاد] শব্দের অর্থ হচ্ছে জন্ম, আর [عيد ميلاد] অর্থ জন্মদিন, আর যখন তা [عيد ميلاد النبي] অর্থাৎ নবীর জন্মদিন। এবার বলুন তো ঈদে মিলাদ উন নবীর অর্থ হচ্ছে নবী যেদিন জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাহলে সেই দিন কি খুশির নয়? আপনি কি আপনার জীবনের স্বরনীয় দিন গুলকে স্বরন করে খুশী হন না?
যারা সেই দিনে খুশি হলে বিদয়াত? হারাম? এমন কথা বলে তাদের কে বলতে হয় যেঃ পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা শুনলে যারা খুশি হওয়া বা আনন্দ করা কে বিদয়াত বলে, তারাই হচ্ছে ইবলিশ শয়তান, কারন শয়তান তার জীবনে ৪ বার খুব কেদেছিলো, তার মধ্যে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দিন ছিলো অন্যতম!!
যে সকল ওহাবী/দেওবন্দী/আহলে হাদিস/খারেজী/লা মাজহাবি/সালাফি যারা পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে তারা যে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় ইবলিশ শয়তানের গোলামী করে ইবলিশের সুন্নত পালন করে, তার কান্নার দিবসে খুশি হয়ে তার বিরোধিতা না করে কষ্ট পায় তারাই ইবলিশের কায়িম মাকাম। আর এই বিষয়ে এটা একটা প্রামান্য দলীল↓↓
সাইয়্যিদুল মুরসালিন ইমামুল মুরসালিন নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফে সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো কে জানেন?
সব চাইতে বেশি কষ্ট পেয়েছিলো ইবলিশ শয়তান। সে এতোটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, কষ্টে সে রীতিমত কান্না আর বিলাপ করেছে।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্নিত আছেঃ→ [ﺍﻟﻠﻪﻋﻠﻴﻪ ﺣﻴﻦ ﻟﻌﻦ ﻭﻟﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺃﻥ ﺇﺑﻠﻴﺲ ﺭﻥ ﺃﺭﺑﻊ ﺭﻧﺎﺕ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺣﻴﻦ ﺃﻧﺰﻟﺖ ﺍﻟﻔﺎﺗﺤﺔ ﻭﺣﻴﻦﺃﻫﺒﻂ ﻭﺣﻴﻦ]
ইবলিশ শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল।
√ প্রথম বার যখন সে খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মালউন বা চিরো অভিশপ্ত বলে সাব্যস্থ হয়।
√ দ্বিতীয়বার যখন তাকে মহা সম্মানিত বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়।
√ তৃতীয়বার, যখন সাইয়্যিদুল মুরসালিন ইমামুল মুরসালিন নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ হয়।
√ এবং চতুর্থবার যখন পবিত্র সূরা ফাতেহা শরীফ নাযীল হয়।
দলীলঃ- আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়াঃ- ২য় খণ্ড ১৬৬ পৃষ্ঠা।
এখন বর্তমান সমাজে মানুষ রুপী কিছু ইবলিশ আছে, যারা মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা শুনলেই এদের শরীর জ্বালা পোড়া করে। সূতরং প্রমান হচ্ছে, যারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধী তারা মূলত শয়তানের উম্মত। কারন এদিনে শয়তান কষ্ট পেয়েছিলো এখন তার উম্মতরা কষ্ট পাচ্ছে।
শুধু তাই নয় বরং যেসব মানুষ নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করেও অপপ্রচার করছে যে, ঈদে মীলাদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা বিদয়াত/হারাম। নাউযুবিল্লাহ!!! তাদের কাছে যখন দলিল চাওয়া হয় যে আপনারা বিদয়াত/হারাম কোথায় পেলেন? তখন অনেকে অজ্ঞতা আর মূর্খতার কারনে বলে থাকে যে জন্মদিন পালন করা খ্রিষ্টানদের রীতিনীতি? নাউযুবিল্লাহ কিন্তু তাদের কাছে দলিল চাইলে তারা কখনোই তা দিতে সক্ষম হয়না যে ইহা বিদয়াত বা খ্রিষ্টানদের কালচার। আমি এদের অনেক কে জিজ্ঞেস করেছি যে খ্রিষ্টানেরা কবে থেকে জন্মদিন পালন করে, আর মুসলমানেরা কবে থেকে জন্মদিন পালন করে এর দলিল দাও। কিন্তু মূর্খদের দাঁতে দাঁত লেগে গেছে। সেই বিদয়াত বলনে ওয়ালা বিদয়াতিরা আর কথা বলতে পারে নি।
একজন আমাকে বিদয়াতের ভুলভাল সংজ্ঞা দিয়ে বললো ভাই, ঈদে মীলাদুন নবী পালন করা যাবে না। এটা বিদয়াত। আমি বলছিলাম যে ভাই, জন্মদিন পালন করা নব্য উদ্ভাবিত আমল এই কথা পেলেন কোথায়? একবার বলেন, জন্মদিন পালন করা খ্রিষ্টানদের রীতিনীতি। এখন বলছেন, জন্মদিন পালন করা নব্য উদ্ভাবিত আমল। আপনার দলিলহীন কোন কথাকেই আমি সত্য বলে মেনে নিতে পারছি না। উপরন্তু আমি যদি দলিল দিয়ে প্রমাণ দেখাতে পারি যে, স্বয়ং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্মদিন পালন করতেন তখন ফায়সালা কি হবে? লোকটা চুপ করে গেল। মনে মনে কি যেন ভেবে দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো, আগে প্রমাণ দেখান। তারপর ফায়সালা হবে। বাহ্! খুব ভালো কথা। আসেন তাহলে কুরআন শরীফ এবং সহীহ হাদিস শরীফের দলিল দেখে মিলিয়ে নেই।
কুরআন শরীফ অনুসারে সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক জন্মদিনের শুভেচ্ছা দেন এবং সেই অনুসারে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ইসলামিক পন্থায় দেওয়া হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সুন্নত এবং যে কেউ জেনেশোনে, বোঝে, ইহাকে ইহুদী নাসারার কালচার বলবে সে মহান আল্লাহ পাক কে তা বলবে এবং মহান আল্লাহ পাক কে বলার অর্থই হচ্ছে সে মুরতাদ হয়ে যাওয়া।
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ [وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا] উনার (ইয়াহিয়া আলাইহিস সালাম) প্রতি সালাম-যেদিন উনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন উনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।
[وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا] আমার (ইসা আলাইহিস সালাম) প্রতি সালাম যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করেছি, যেদিন বিছাল শরীফ লাভ করবো এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব।
Reference:-
√পবিত্র সূরা মারিয়াম আলাইহাস সালামঃ ১৯ আয়াত শরীফ-১৫/৩৩।
আর হাদিস শরীফেঃ হযরত আবু কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বনর্ণা করেন যেঃ [وَحَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، عَنْ غَيْلاَنَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الأَنْصَارِيِّ، رضى الله عنه أَنَّرَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ “ فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ]
বাংলা অর্থঃ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ইয়া রসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সোমবারের দিন কেন রোযা রাখেন?” মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করলেন, “ওই দিন আমার বিলাদত(জন্ম) শরীফ হয় এবং ওই দিনই আমার উপর ওহী মুবারক নাযিল হয়”। সুবহানআল্লাহ!!!
Reference:-
√১ মুসলিম শরীফ, বুক ৬, রোজা অধ্যায়, ভলিউম ৭, পৃষ্টা ৩২৩, হাদিস শরীফ নং ২৮০৭।
√২ সুনান আল কুবরা লিল বায়হাকী শরীফ, ভলিউম ৪, পৃষ্টা ২৮৬।
√৩ মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক শরীফ, ভলিউম ৪, পৃষ্টা ২৯৬, হাদিস শরীফ ৭৮৬৫।
√৪ সুনান আবু দাউদ শরীফ, ভলিউম ৭,পৃষ্টা ২৫৫, হাদিস শরীফ ২৪২৮।
√৫ সুনানে বায়হাকী [কুবরা], হাদীছ শরীফ নং-৮২১৭।
√৬ ইবনে খুজাইমা, হাদীছ শরীফ নং-২১১৭।
√৭ মুসনাদে আবি আওয়ানা, হাদীছ শরীফ নং-২৯২৬।
√৮ মুসনাদে আহমাদ, হাদীছ শরীফ নং-২২৫৫০।
তখন সে বললো যে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের বিলাদত(জন্ম) শরীফ উপলক্ষে সাওম পালন করেছেন। কিন্তু অন্য কোন সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে কি রোযা রাখার বা উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন?
আমি বললাম হ্যাঁ সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম উনারা খুশি প্রকাশ করেছিলেন। ঈদ পালন করেছিলেন। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফর করতেন, বিলাদত সম্পর্কিত মুবারক ঘটনা আলোচনা করতেন। নাতে রসূল পাঠ করতেন, দরূদ ও সালাম পেশ করতেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর। নিজেরা ভালো-মন্দ-খেতেন, অন্যাদেরও খাওয়াতেন। সুবহান আল্লাহ!
আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা শরীফের জীবনে বকরী জবেহ করে ফকির-মিসকিনদের মাঝে তা বন্টন করে দিয়ে নিজের আগমন দিবস পালন করেছেন। এই জন্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনাকে সমগ্র জাহানের জন্য রহমত বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আর এর মাধ্যমে তিনি এই জন্মদিন এর উদযাপনকে উনার উম্মতের জন্য শরীয়ত সম্মত করে দিয়েছেন। ইমাম জালালউদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘আল-হাবী’ নামক কিতাবের মিলাদ অধ্যায়ে এ সম্পর্কিত হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
Reference:-
√ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম সুয়ুতী আল হাবিলুল ফাতোয়া ১ম খন্ড ১৯৬ পৃষ্ঠা।
√ ইমাম সুয়ুতী হুসনুন মাকাসিদ ফি আমালিল মওলিদ ৬৫ পৃষ্ঠা
√ ইমাম নাবহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন ২৩৭ পৃষ্ঠা।
আর সাহাবায় কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ খুলাফায় রাশিদিন আলাইহিমুস সালামগণ ঈদে মীলাদুন নবী পালন করেছেন এবং পালনের পক্ষেও বলেছেন, যেমনঃ-
মক্কা শরীফের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমামুল মুহাদ্দেসিন আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ ইবনে হাজার আল হায়তামী আশশাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলাইহি (যার জন্ম ৮৯৯ হিজরী, ইনতিকাল ৯৭৪ হিজরী) উনার লিখিত “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীস গুলো তিনি বর্ণনা করেন-
১) হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম আনহু বলেন –
“যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” ।
২) হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম বলেন –
“যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (বিলাদত দিবসকে) বিশেষ মর্যাদা দিল সে মূলতঃ ইসলামকেই পূনরুজ্জীবিত করল।“
৩) হযরত ওসমান যুন্নুরাইন আলাইহিস সালাম বলেন –
“যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করল সে যেন বদর ও হুনায়েন যুদ্ধে শরীক থাকল।”
৪ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম বলেন –
“যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করল সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
(কিতাব সূত্রঃ ‘আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম’। বইটির লেখক বিশ্ববিখ্যাত ইমাম মুহাদ্দিছ, মুফাসসির হযরতুল আল্লামা আহমদ শিহাবুদ্দীন হাইতামী (হাইছামী) শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মূল বইটি আরবিতে পিডিএফ লিঙ্কঃ http://goo.gl/naL5uN)
আল্লামা ইবন হাজর হায়তামী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নির্ভরতা প্রশ্নাতীত। উনার উক্ত কিতাবের উপর বহু শরাহ লিখা হয়েছে। তন্মধ্যে আল্লামা দাউদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আল্লামা সাইয়্যিদ আহমদ আবেদীন দামেস্কি রহমাতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। উনার রিওয়াতকৃত উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণীত হলো যে, খোলাফায়ে রাশেদী আলাইহিমুস সালামগনের যুগেও মীলাদুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চালু ছিল এবং উনারাও এর জন্য অন্যকে তাগীদ করেছেন।
আল্লামা ইউসুফ নাবহানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘জাওয়াহেরুল বিহার’ কিতাবের ৩য় খন্ডের ৩৫০ পৃষ্ঠায় উপরে উল্লিখিত বর্ণনা উপস্থাপন করে বলেছেন যে, আমার উপরোক্ত হাদীস শরীফ সমূহের সনদ জানা রয়েছে। কিন্তু কিতাব বড় হয়ে যাবার আশংকায় আমি সেগুলো অত্র কিতাবে উল্লেখ করিনি।
আর সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগন সব সময় রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিলাদ শরীফ পাঠ করতেন যেমনঃ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছেঃ- [عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى]
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উঁনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজ গৃহে সমবেত ছাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে মহান আল্লাহ পাক উঁনার হাবীব হুযূর পাঁক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার বিলাদত শরীফ(মীলাদুন নবী) এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক-উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাঁক উঁনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার শানে ছলাত-সালাম (দুরূদ শরীফ) পাঠ করছিলেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিঁনি সেখানে উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।
দলিল সূত্রঃ কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা-৩৫৫।
[عَنْ حَضْرَتْ أُبَىّ ِ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنّـِىْ أُكْثِرُ لصَّلَاةَ عَلَيْكَ فَكَمْ أَجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلَاتِىْ؟ فَقَالَ: «مَا شِئْتَ» قُلْتُ: الرُّبُعَ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ فَاِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ»
قُلْتُ: النّـِصْفَ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكَ » قُلْتُ: فَالثُّلُثَيْنِ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ فَإِنْ زِدْتَ فَهُوَ
خَيْرٌ لَّكَ » قُلْتُ: اَجْعَلُ لَكَ صَلَاتِىْ كُلَّهَا؟ قَالَ: « قَالَ « إِذًا تُكْفٰى هَمُّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ]
দলিল সূত্রঃ (তিরমিযী শরীফ, মুস্তাদরকে হাকিম ২/৪২১, শুয়াবুল ঈমান ৩/১৩৮, মিশকাত শরীফ, জামিউল আহাদীছ ৩২/৩৭৩, জামিউল উছূল ১১/৮৪৬৭, রিয়াদুছ ছালিহীন ১/৩৪৭)
শুধু তাই নয় বরং সৃষ্টির শুরুই হয়েছে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপনের মধ্য দিয়ে যেমনঃ
হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্নিতঃ [عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك]
অর্থঃ- “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম যখন দুনিয়াতে তাশরীফ আনেন তখন তিনি সবসময় কান্নাকাটি করতেন। একদিন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকটে আরজ করলেন, হে মহান আল্লাহ! পাক “মুহম্মদ” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় নিয়ে আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী মুবারক নাজীল হলোঃ- “মুহম্মদ” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আপনি কিভাবে চিনলেন, আপনি তো উনাকে কখনো দেখেননি? তখন তিনি বললেন-যখন আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ। তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, “মুহাম্মদ” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই যার নাম আপনি স্বীয় নামের সাথেই রেখেছেন। তখন অহী মুবারক নাজীল হলো-তিনি সর্বশেষ রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আপনার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবেন। যদি তিনি না হতেন, তাহলে আপনাকেও সৃষ্টি করা হতো না।
Reference:- এখানে দেখুন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেনঃ “মহান আল্লাহ পাক হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম-কে বলেছেন, ওহে ঈসা আলাইহিস সালাম! হুযুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতকেও তা করতে বলুন। রাসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম না হলে আমি আদম আলাইহিস সালামকেও সৃষ্টি করতাম না, বেহেশত বা দোযখ কিছুই সৃষ্টি করতাম না।”
Reference:- এখানে দেখুন।
যে বিষয়টি নিয়ে মতভেদ আছে যে নবীজির দুনিয়ায় আগমনের দিন (জন্মদিন/বিলাদত/মীলাদুন নবী) আসলে কবে?
১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ কে না মানার জন্য অনেকে ৯ই রবিউল আউয়াল অথবা ২রা রবিউল আউয়াল বলে থাকে? কিন্তু এগুলো বলার জন্য কোন গ্রহণযোগ্য প্রমান তারা পেশ করতে পারেনা।
তবে নবীজির দুনিয়ায় আগমনের দিন (জন্মদিন/বিলাদত/মীলাদুন নবী) সম্পর্কে সহিহ হাদীস শরীফ কি বলেন আসুন দেখে নেই?
১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিন। এটাই সবচেয়ে ছহীহ ও মশহূর মত।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাফিয আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি ছহীহ সনদ সহকারে বর্ণনা করেছেনঃ- [عن عفان عن سعيد بن مينا عن جابر وابن عباس رضى الله تعالى عنهما قالا ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول]
অর্থ: “হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত তিনি হযরত সাঈদ ইবনে মীনা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত জাবির ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মদিন ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফের সোমবার শরীফ হয়েছিল।” কিতাব সূত্রঃ (বুলুগুল আমানী শরহিল ফাতহির রব্বানী, আল বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া)
→ উক্ত হাদীছ শরীফ বর্ণনার সনদের মধ্যে প্রথম বর্ণনাকারী হযরত আফফান রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে মুহাদ্দিছগণ বলেছেন,
“তিনি একজন উচ্চ পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য ইমাম, প্রবল স্মরণশক্তি ও দৃঢ়প্রত্যয় সম্পন্ন ব্যক্তি।” (খুলাছাতুত্ তাহযীব)
→ “দ্বিতীয় বর্ণনাকারী সাঈদ ইবনে মীনা। তিনিও অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য।” (খুলাছাহ্, তাক্বরীব)
→ আর তৃতীয় হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
এ দু’জন উচ্চ পর্যায়ের ফক্বীহ ছাহাবীর বিশুদ্ধ সনদ সহকারে বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, “১২ই রবীউল আউয়াল শরীফ হচ্ছে হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জন্ম/বিলাদত/মীলাদুন নবী দিবস।” এ ছহীহ ও নির্ভরযোগ্য বর্ণনার উপরই ইমামগণের ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
কিতাব সূত্রঃ (সীরাত-ই-হালবিয়াহ, যুরক্বানী আলাল মাওয়াহিব, মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ)
উপরোক্ত বিশুদ্ধ বর্ণনা মুতাবিক ১২ই রবীউল আউয়াল শরীফই হচ্ছে নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জন্ম দিবস। এটাই ছহীহ ও মশহূর মত। এর বিপরীতে যেসব মত ঐতিহাসিকগণ থেকে বর্ণিত রয়েছে তা অনুমান ভিত্তিক ও দুর্বল। অতএব, তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
আর জগৎবিখ্যাত অ্যাস্ট্রোনমারদের গবেষণায় নির্ভুলভাবে প্রমাণ হয়েছে যে ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফই হচ্ছেন নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমণ (জন্ম/বিলাদত) শরীফ এর দিন।
নবীজির বিদায় গ্রহণের দিন ছিলোঃ
হিজরী সনঃ ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
ঈসায়ী সনঃ ৬৩২ সাল, ৮ই জুন।
বারঃ সোমবার।
(১ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
Back Calculation করে দেখা যায়, ৫৭০ ঈসায়ী সনে রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস শুরু হয়েছিলোঃ দ্বিমত অনুসারেওঃ
হয়, ২৩ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ২৯শে দিনে হয়)
অথবা,
২৪ শে এপ্রিল ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে। (যদি সফর মাস ৩০ শে দিনে হয়)
কিন্তু, এটা নিশ্চিত ৫৩ হিজরী পূর্ব সনে সফর মাস ৩০ দিনের হয়েছিলো। **
(সূত্রঃ ২ নং দ্রষ্টব্য দেখুন)
সে অনুযায়ী আপনি নিজেই গণনা করলে পাবেনঃ
৫৭০ সালের ৫ই মে সোমবারই হচ্ছেন পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
তাহলে আমরা দেখতে পেলাম- বিলাদত(জন্ম) শরীফ দিবসঃ ৫ই মে, ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরী সোমবার।
বিদায় দিবসঃ ৮ই জুন, ৬৩২ ঈসায়ী সন, ১১ হিজরী সোমবার।
দুই ইংরেজী সনের সময়ের পার্থক্য-
৬২ বছর ১ মাস ৩ দিন
সুতরাং চন্দ্র বৎসর অনুযায়ী-
৬২*৩৬৫+৩১+৩ = ২২৬৬৪ ভাগ ৩৫৫ দিন = ৬৩+ বৎসর।
১ নং দ্রষ্টব্যঃ আখেরী চাহার শোম্বা বলা হয় সফর মাসের শেষ বুধবারকে, কিন্তু কোন তারিখ নিদ্দিষ্ট করা হয় না। এর কারণ সফর মাসের শেষ বুধবার ছিলো হিজরী মাসের ৩০ তারিখ, যা সব সময় আসে না। তাই পরবর্তীতে এ দিনটি যেনো প্রতি বছর পালন করা যায় সেই সুবিধার্থে সফর মাসের শেষ বুধবার ধরে দিনটি পালন করা হয়। এখন ৩০ তারিখ যদি বুধবার ধরা হয়, তবে আপনি নিজেই হাতে গুনে দেখুনে ১২ তারিখ সোমবার হয়।
২ নং দ্রষ্টব্যঃ ৫৭০ ঈসায়ী সন ৫৩ পূর্ব হিজরীতে সফর মাস যে ৩০ দিন ছিলো তার প্রমাণ দুটিঃ
ক) চাদ গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায়, নবীজির বিলাদত শরীফের আগে পর পর ৪ চন্দ্র মাস ৩০ দিন করে হয়েছিলো।
খ) যদি সফর মাস ৩০ না হয়, তবে বিলাদত দিবস সোমবার হয় না। অথচ সহিহ হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় নবীজি নিজেই বলেছেন উনার বিলাদত গ্রহণ হচ্ছে সোমবার দিন। তাই অ্যাস্ট্রোনমার বা জোর্তিবিজ্ঞানীদের গবেষণায় নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত নবীজির বিলাদতের দিন অবশ্যই ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ।
এবার আসা যাক জন্মদিন আর অফাৎ শরীফের দ্বীন এক হওয়ায় আমরা কি খুশি(ঈদের দিন) হিসেবে নেবো নাকি কান্নাকাটি করবো শোক প্রকাশ করবো?
যারা বলে রবিউল আউয়াল শরীফ এর ১২ তারিখ নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার বিছাল(ওফাৎ) শরীফের দিবস তাই শোক পালন করতে হবে (নাউযুবিল্লাহ) তাদের জন্যঃ-
প্রথমতঃ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি হায়াতুন্নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর দ্বীতিয়ত মহান আল্লাহ পাক উনার সরাসরি নিষেধ যা নিচে দেওয়া হলোঃ [لَا يَحِلُّ لِامْرَأَةٍ مُسْلِمَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ تُحِدَّ فَوْقَ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ إِلَّا عَلَى زَوْجِهَا أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا]
অর্থঃ মহান আল্লাহ তা’আলা এবং কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে এমন কোন মুসলিম নারীর জন্য (কারো মৃত্যুতে) ৩ দিনের বেশি শোক পালন করা হালাল নয়। তবে তার স্বামীর জন্য ৪মাস ১০দিন শোক পালন করতে পারবে।
√ দলিলঃ বুখারী শরীফ হাদীস নং- ৫৩৩৮।
কারো ইন্তিকালের ৩ দিন পর শোক পালনের রীতি শিয়াদের কালচার। আর শিয়ারা আকিদ্বাগত কাফির। তাই এখন ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফে শোক পালন করা মুসলমানদের জন্যে যায়েজ নয়।
এবং যারা বলে নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার ওফাৎ গ্রহণের দিন ঈদের দিন কেমনে হয় তাদের জন্য নিচের দলিলগুলো।
১.”তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে, জুমুয়া শরীফের দিন। এদিনে আদম আলাইহিস সালাম পয়দা হয়েছেন এবং এদিনেই তিনি ওফাৎ বা ইন্তেকাল লাভ করেন!
√ দলিল সুত্রঃ [সহীহ নাসায়ী শরীফ -জুমুয়ার অধ্যায়]
২.এ জুমুয়া শরীফের দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক ঈদের দিন সাব্যস্ত করেছেন!”
√ দলিল সুত্রঃ [সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ; মুসনাদে আহমদ শরীফ; মিশকাত শরীফ; জুমুয়া শরীফ অধ্যায়]
তাহলে দেখা যাচ্ছে এ দিন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার ওফাৎ হবার পরেও ঈদের দিন বলা হয়েছে।
তাহলে যিনি মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত সমস্ত নবী রাসুল আলাইহিমুস সালাম সহ সমস্ত কায়েনাতের নবী, উনার জন্মদিন ও ওফাৎ মুবারক এর দিন এক বলে যারা বলে থাকে ওফাৎ এর দিন দুঃখ প্রকাশ করার কথা, তাহলে আদম আলাইহিস সালাম উনার ওফাৎ হবার পরেও ঈদের দিন হয় কেম্নে? তবে কি তাদের কাছে হযরত আদম সফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার চেয়েও বড়? নাউযুবিল্লাহ!!!
এর পরেও যারা বলে সাইয়্যিদুল মুরসালিন ইমামুল মুরসালিন নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছাল(অফাৎ দিবস) শরীফে কিভাবে খুশী পালন করবো তাদের জানা উচিৎ পবিত্র দ্বীন ইসলামে ৩ দিনের বেশী শোক পালন হারাম আর ঐ তিন দিন স্বামীর জন্যে স্ত্রীর কেবল। আর সাইয়্যিদুল মুরসালিন ইমামুল মুরসালিন নূরে মুজাসসাম হাবিবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতদের বলে গেছেন আমার দুনিয়ার জীবন মোবারক তুমাদের কাছে যেমন কল্যাণকর তেমনী আমার রওজা শরীফের জীবন মুবারক ও তুমাদের জন্যে কল্যাণকর।
সহীহ বুখারী শরীফ কিতাবুল জানাইয (জানাযা অধ্যায়)এর অনুচ্ছেদঃ-
(باب احداد المراة علي غير زوجها)
হাদিস শরীফ নং ১২০৫, ১২০৬, ১২০৭ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশনী)
হাদিস শরীফ নং ১১৯৭, ১১৯৮,১১৯৯ (আধুনিক প্রকাশনী বাংলাদেশ)
হাদিস শরীফ নং ১২৭৯,১২৮০, ১২৮১ (তাওহীদ পাবলিকেশন্স বাংলাদেশ)
এবার আসুন জেনে নেই পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের ইতিহাস।
১ম হিজরী শতকঃ সাহাবা যুগে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিলের প্রমান- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপস্থিতিতে সাহাবায়ে কিরাম মীলাদ মাহফিল অনুষ্ঠান করেছেন।
নিম্নে কয়েকটি দলিলঃ
১. হযরত আল্লামা জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি যার সনদ সহ প্রায় ২ লক্ষ হাদীছ শরীফ মুখস্থ ছিল সেই তাজুল মুফাস্সিরীন মোহাদ্দেস মুসান্নিফ সুয়ুতি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত কিতাব “সুবলুল হুদা ফি মাওলেদে মুস্তাফা আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবে সহি হাদিস শরীফখানা বর্ণিত রয়েছে।
“হযরত আবু দ্বারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হাবিবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন হযরত আমির আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে গেলেন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখতে পেলেন আমির আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবার পরিজন ও আত্বীয় স্বজনদের নিয়ে একত্রিত হয়ে খুশি মনে রাসুল পুর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ নিয়ে আলোচনা করছেন। অর্থাৎ নবীজি এইদিনে পৃথিবীতে আসছেন, পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মাখলুক আনন্দিত হয়ে ইত্যাদি। এই ঘটনা শ্রবণ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে হযরত আমির আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে বললেন, মহান আল্লাহ পাক আপনার জন্য রহমতের দরজা প্রশস্ত করেছেন এবং সমস্ত ফিরিস্তাগন আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। যে আপনার মতো এরূপ কাজ করবে সেও আপনার মত নাযাত (ফজিলত) লাভ করবে।” (সুবহানাল্লাহ!)
খোলাফায়ে রাশেদীন উনাদের যুগেঃ- পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অন্যতম প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা শিহাব উদ্দিন আহমদ ইবনে হাজার আল হায়তামী আশ্ শাফী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (৮৯৯-৯৭৪ হিজরী) উনার সুবিখ্যাত “আন নেয়মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাবের মধ্যে নিম্নোক্ত হাদীস শরীফ বর্ণনা করেনঃ-
সর্বশ্রেষ্ঠ সাহবী ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষ্যে এক দিরহাম খরচ করবে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”। এভাবে উক্ত কিতাবে সম্মানিত ৪ জন খলিফা উনাদের তরফ থেকে ঈদে মীলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করার পৃথক পৃথক ফযীলত ঘোষণা বর্ণিত রয়েছে।
২য় হিজরী শতকঃ ২য় হিজরী শতকে (আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর পুর্বে) হযরত তাবে তাবেঈন উনাদের যামানায় আব্বাসীয় খিলাফতে পবিত্র ঈদে মিলাদে হাবিবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন হতঃ- আব্বাসীয় খিলাফতের খলীফা হারুন অর রশীদের আম্মা আল খায়যুরান (মৃত্যু ১৭২ হিজরি ২য় শতক /৭৮৯ খৃষ্টাব্দ – ৮ম শতক) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার স্থানে ইবাদত বন্দেগী করার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। যেখানে মুসলমানগণ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঈদে মিলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করতেন।
সুত্রঃ ইন্টারনেটঃ ১. Encyclopedia of Islam, Second Edition. Brill Online Reference Works; ২. Mawlid or Mawlud’, Encyclopedia of Islam; “Mawlid or Mawlud” Second Edition. Brill Online Reference Works.
৩য় হিজরী শতকঃ হিজরি ৩য় শতকের মক্কা শরীফের মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী (মৃত্যু ২১৯ হিঃ/৮৩৪ খৃঃ) উনার “আল মক্কাহ”ভলি ২, ১৬০ পৃঃ উল্লেখ করেন “হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে বিলাদতি শান প্রকাশ করেন সেখানে নামাজ আদায় হত।”
আল নাক্কাস (২৬৬-৩৫১ হি) উনার “আল ফাসি শিফা আল গারাম” (খ- ১, পৃ ১৯৯) উল্লেখ করেন “প্রতি ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত (আগমন)স্থানে দুপুরে দোয়া করা হত”।
৪র্থ হিজরী শতকঃ আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর পুর্বেও ঈদে মিলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হত। সাইয়্যিদ মুহম্মদ সুলাইমান নদভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “সিরাতুন নবী” জীবনী গ্রন্থে (খ- ৩) উল্লেখ করেছেন ৩/৪ শতক হিজরী মীলাদ শরীফ উদযাপন করা হত।
হিজরী ৩য় শতকের পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মুসলিম ইতিহাসবিদ আল আজরাকী (ওফাত ২১৯ হিঃ/৮৩৪ খৃঃ) উনার “আল মক্কাহ” (খ- ২, ১৬০ পৃঃ) উল্লেখ করেন “হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন সেখানে নামায আদায় হত”।
হযরত আল নাক্কাস (২৬৬-৩৫১ হি) রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল ফাসি শিফা আল গারাম” (খ- ১, পৃ ১৯৯) উল্লেখ করেন “প্রতি সোমবার হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মস্থানে দুপুরে দোয়া করা হত”।
৫ম হিজরী শতকঃ আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে বাদশাহ মুজাফর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পুর্ব থেকেই ঈদে মিলাদে হাবীবির প্রচলন ছিল। প্রায় ৯০০ বছর পুর্বে ওমর বিন মুল্লা মুহম্মদ মউসুলি রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মিলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিবসকে নিয়মিতভাবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে জারী রাখার প্রচলন চালু করেন। উনার অনুসরনে ইসলামের অমর সিপাহসালার সুলতান সালাউদ্দিন আইয়ুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ভগ্নিপতি আরবলের বাদশাহ মালিক আবু সাঈদ মুজাফফর আল দীন (১১৫৪- ১২৩২ খৃঃ) রাষ্ট্রীয়ভাবে ঈদে মীলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুষ্ঠান উদযাপন প্রচলন করেন। উল্লেখ্য, উনারা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম করেছেন কিন্তু এর পুর্ব থেকেও ঈদে মীলাদ পালন হত) ইবনে খালকান আরবালি শাফেয়ী উক্ত অনুষ্ঠানের সাক্ষী।
“তারিখ-ই-মারাত আয জামান” উনার মতে ঐ অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরছ করা হতো। হিজরী ৭ম শতকের শুরুতে সে যুগের বিখ্যাত ওলামা ও প্রসিদ্ধ ফোজালাগণের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব আবুল খাত্তাব উমর বিন হাসান দাওহিয়া ক্বলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর একটি বই লিখেন যার নাম দেন ‘আত-তানভির ফি মাওলিদিল সিরাজ আন নাজির। তিনি বাদশাহকে এই বই উপহার প্রদান করেন। বাদশাহ প্রীত হয়ে তাঁকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন।”
শুধু আরবলের বাদশাহ নয়, মিশরের সুলতানও ইহা উদযাপন করতেন। এ দিবসে উনারা হাজার হাজার স্বর্নমুদ্রা ব্যয় করতেন। যার সাক্ষী হলে ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি। সুলতান আবু হামু মুসা তালামসানী এবং পুর্বেকার আন্দালুস ও আকসার শাসকেরা এ পবিত্র দিবস পালন করতেন। আবদুল্লাহ তন্সী সুম্মা তালামসানী এনিয়ে “রাহ আল আরওয়াহ” নামক একটি বই লিখেছেন।
৬ষ্ঠ হিজরী শতকঃ ইবনে কাসীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাকে সালাফী-ওহাবীরা তাফসীর ও ইতিহাস শাস্ত্রে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করে থাকে, তিনি বাদশাহ মালিক আল-মুযাফফর রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন। তিনি লিখেন- “বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দীন ইবনে যাইনুদ্দীন আবু সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি দানশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অন্যতম ছিলেন। সাথে সাথে তিনি সম্মানিত বাদশাও ছিলেন। উনার বহু পূন্যময় কাজের আলামত এখনও বিদ্যমান রয়েছে।” [সূত্রঃ- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৩ তম খন্ড, ১৩৬ পৃষ্ঠা] অনুরূপ বিবরণ বিখ্যাত গ্রন্থ সীরাতে শামী, সীরাতে হালবীয়া, সীরাতে নববীয়া ও যুরকানী” ইত্যাদিতেও বিদ্যমান আছে।
৭ম হিজরী শতকঃ ৭ম শতকের ইতিহাসবিদ শায়েখ আবু আল আব্বাস আল আযাফি এবং আবু আল কাসিম আল আযাফি (সার্জারির জনক) উনাদের কিতাব “আল দুরর আল মুনাজ্জাম” কিতাবে লিখেন – “পবিত্র মক্কা শরিফ উনার মধ্যে ঈদে মীলাদের দিবসে ধার্মিক ওমরাহ হজ্জ্বযাত্রী এবং পর্যটকেরা দেখতেন যে সকল ধরনের কার্য্যক্রম বন্ধ, এমনকি ক্রয়-বিক্রয় হতো না, তাঁদের ব্যতিত যারা সম্মানিত বিলাদত শরীফ উনার স্থান দেখতেন এবং সেখানে জড়ো হয়ে দেখতেন। এ দিন পবিত্র কাবা শরীফ সকলের জন্য উন্মুক্ত করা হত।”
৮ম হিজরী শতকঃ ৮ম শতকের প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা উনার ‘রিহলা’ কিতাবের ভলিউম ১, ৩০৯ এবং ৩৪৭ পৃষ্ঠায় লিখেন- “প্রতি জুমুয়া উনার নামাযের পর এবং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইই ওয়া সাল্লাম উনার আগমন দিবসে বানু শায়বা এর প্রধান কতৃক পবিত্র কাবা শরিফ উনার দরজা মুবারক খোলা হতো। পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিচারক নজম আদ দীন মুহম্মদ ইবনে আল ইমাম মুহুয়ি আল দিন আল তাবারি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বংশধর এবং সাধারন জনগনের মাঝে খাবার বিতরন করতেন।”
৯ম হিজরী শতকঃ ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম জালালুদ্দিন আস সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত “আল-হাওয়ী লিল্ ফাতাওয়া” কিতাবের ১ম খ-, ২৯২ পৃষ্ঠায় ঈদে মীলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আালাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলীল রয়েছে।
১০ম হিজরী শতকঃ ১০ হিজরী শতকের ইতিহাসবিদ শায়েখ ইবনে যাহিরা উনার “জামি আল লতিফ ফি ফাদলি মক্কাতা ওয়া আহলিহা” এবং শায়েখ হাফিয ইবনে হাযার আল হায়তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল মাওলিদ আল শরিফ আল মুনাজ্জাম” এবং ইতিহাসবিদ শায়েখ আল নাহরাওয়ালি উনার ‘আল ইমাম বি আলাম বায়েত আল্লাহ আল হারাম’ কিতাবের ২০৫ পৃষ্টায় লিখা রয়েছে- “প্রতি বছর ১২ রবিউল আউওয়াল শরিফ বাদ মাগরীব ৪ জন সুন্নি মাযহাব সম্মানিত ইমাম, বিচারক, ফিক্বাহবিদ, শায়েখান, শিক্ষক, ছাত্র, ম্যাজিস্ট্রেট, বিজ্ঞজন এবং সাধারন মুসলমানগন মসজিদের বাহিরে আসতেন এবং তাসবীহ-তাহলীল এর সাথে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার বাড়ি মুবারক পরিদর্শন করতেন। সম্মানিত বাড়ি মুবারকে যাওয়ার পথ আলোকসজ্জা করা হত। সকলে উত্তম পোষাক পরিধান করতেন এবং সন্তানদের সাথে নিতেন।”
১১তম হিজরী শতকঃ সমগ্র বিশ্বে এক নামে স্বীকৃত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (আজ থেকে পাঁচশত বছর পূর্বে যার জন্ম) উনার অসংখ্য কিতাবের মধ্যে একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থের নাম হচ্ছে “আল মাওরিদুর রাভী ফি মাওলিদিন নাব্যিয়”। উক্ত কিতাবের ২৯ পৃষ্ঠায় তিনি ঈদে মীলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন সম্পর্কে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ থেকে দলীল পেশ করেছেন।
১২তম হিজরী শতকঃ হযরত আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ননা করেন, “মদীনা শরীফবাসী ঈদে মীলাদুন নবীতে খুবই আগ্রহ, উৎসাহ ও আনন্দের সহিত এ দিবস উদযাপন করতেন।” (মাওরিদ আর রাওয়ী ফি মাওলিদ আন নাবী- পৃ-২৯)
১৩তম হিজরী শতকে ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনঃ নির্ভরযোগ্য আলিম মাওলানা হাফিজ মুহাম্মদ আব্দুল হক্ব এলাহাবাদী মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার স্বরচিত বিখ্যাত কিতাবে শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মন্তব্য তুলে ধরেছেন এভাবে- “শায়েখ আব্দুল আযীয দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুহররমুল হারাম মাসের অনুষ্ঠান মরসিয়াখানি (শোক গাঁথা পাঠ) সম্পর্কে জনৈক ব্যক্তির জিজ্ঞাসার উত্তরে বললেন, সারা বছরের মধ্যে এ ফকীরের (আমার) বাড়িতে দুটি মজলিস অনুষ্ঠিত হয়।
একটি হচ্ছে মিলাদ শরীফ উনার আলোচনা অনুষ্ঠান, আর অপরটি হচ্ছে শাহাদাতে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার আলোচনা।
প্রথম মজলিসে পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন চারশত বা পাঁচশত এবং প্রায় এক হাজার লোকের সমাগম হয়। সে মজলিসে দুরূদ শরীফ পাঠ করা হয়। আমিও সে মজলিসে উপস্থিত হয়ে বসি। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যেসব ফযীলত বর্ণিত হয়েছে মজলিসে তাও বর্ণনা করা হয়।
আর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনার এবং উনার সাথীদের শাহাদাত লাভের ফযীলত সম্পর্কেও কিছু কিছু হাদীছ শরীফ বর্ণনা করা হয়। আর উনাদের শহীদকারীদের খারাপ পরিণতি সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। এ উপলক্ষে জীন-পরী থেকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আস সাদিসা আলাইহাস সালাম ও অন্যান্য হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে শোক গাঁথা শুনেছেন তারও কিছু কিছু আবৃত্তি করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সহ অন্যান্য হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে বিস্ময়কর অদ্ভুত স্বপ্ন মুবারক দেখেছেন তাও আলোচনা করা হয়।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে, এ হৃদয় বিদারক ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন তাও আলোচনা করা হয়। এরপর পবিত্র কুর’আন মাজিদ খতম করা হয় এবং পাঁচটি আয়াত শরীফ পাঠ করে উপস্থিত লোকদের রূহের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করা হয়। এর মাঝে কোনো ব্যক্তি সুললিত কন্ঠে সালাম পাঠ করলে অথবা (মরসিয়াহ) শোক গাঁথা পাঠ করলে উপস্থিত লোকদের ও ফকীরদের মনটি কোমল হয়ে মুহব্বতের আলোকে আবেগে নয়ন যুগল অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠে এবং কান্নায় অস্থির হয়ে যায়। এ ধরণের আরও অনেক পূণ্যময় কাজ করা হয়।
অতএব এ কাজগুলো যদি বানোয়াট ও শরীয়ত বিরোধী কাজ হতো তাহলে এ ফকীরের নিকট তা বৈধ হতো না এবং আদৌ তা সমর্থন করতাম না।
এখন আসুন মীলাদ শরীফ অনুষ্ঠানের আলোচনায়। পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার মহাসম্মানিত ১২ই শরীফ তারিখ লোকজন পূর্বাভাস মাফিক আমার বাড়িতে এসে জমা হয় এবং দুরূদ শরীফ পাঠে তারা মশগুল হয়। আর এ ফকীরও দুরূদ শরীফ পাঠে তাদের সাথে শামিল হয়। প্রথমত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফ সমূহের কিছু কিছু বর্ণনা করা হয়। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনাবলী। উনার জিসিম মুবারক উনার অবয়বের গঠন আকৃতি, দুগ্ধপানকালীন কিছু অবস্থা ও ঘটনাবলীসহ কিছু কিছু হাদীছ শরীফও বর্ণনা করা হয়।
এরপর উপস্থিত লোকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী এবং ফাতিহার নিয়তে শিরনী ও মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়। এ ছাড়া পুরানো রীতি অনুযায়ী সবশেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুল ফাতাহ বা চুল মুবারক সকলকে দেখানো হয়।” (আদ-দুররুল মুনাজ্জাম ফি হুকুমে আমলে মাওলাদিন নাবীয়্যিল আ’যম, পৃষ্ঠা ২০৯-২১১)
হযরত শাহ মুহম্মদ ইসহাক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার স্থলাভিষিক্ত উস্তাযুল উলামা হযরত মাওলানা শাহ আব্দুল গনী মুহাদ্দিছ দেহলবী মুহাজিরে মাদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহফিলে শরীক হতেন। যেমন- উনার বিশিষ্ট শাগরিদ হযরত শাহ আব্দুল হক্ব মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন,
شیخنا ومرشدنا حضرت عمدۃ المفسرین وزبدۃ المحدثین جناب مولانا شاہعبد الغنی صاحب نقشبندی مجددی قدس سرہ را دیدہ است کہ در محفلمولود النبی صلی اللہ علیہ وسلم کہ فارسی در مدینہ منورہ علی صاحیھاالصلوۃ والسلام بتاریخ دوازدہم ماہ ربیع الاول روز یکشنبہ ۱۲۸۷ھجری در مسجد نبوی شدہ بود تشریف اور دہ شریک ایں محفل شریفشذد وذکر مولود شریف کے در صحن مسجد شریف بر ممبر کدامی ازائمہ یکے بعد از دیگرے متوجہ بطرف روضہ شریف شدہ می خواند نداستماع فرموند وقت قیام ذکر ولادت شریف فرمودند وحال وکیفیات ایںمحفل شریف کہ ظھور شدہ بود خارج از حیطئہ تقریر است ونزدحضرت ایں شاں ترجیح بد لائل صحیح ہماں امور را بود کہ ہر اںبودند.
অর্থ : “আমাদের শায়েখ ও মুর্শিদ উমদাতুল মুফাস্সিরীন, যুবদাতুল মুহাদ্দিছীন জনাব মাওলানা শাহ আব্দুল গনী ছাহেব নকশবন্দী মুজাদ্দিদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে আমি দেখেছি পবিত্র মদীনা শরীফ-এ ১২৮৭ হিজরী সনে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১২ তারিখে ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার দিনে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার অনুষ্ঠানে শরীক হন এবং পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার আঙিনা মুবারক-এ মিম্বরে বসে একের পর এক ইমামগণ পবিত্র রওযা শরীফ উনার দিকে মুখ করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমন মুবারক উনার যে আলোচনা করছিলেন, তা শুনেন। পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ উনার সময় সবার সাথে পবিত্র ক্বিয়াম শরীফও করেন। এ পবিত্র মাহফিলে হাল ও বরকত যা প্রকাশ পেয়েছিল, তা বলার ভাষা নেই।” (আদ-দুররুল মুনাজ্জাম, রিসালায়ে আসরারে মুহব্বত)
১৪তম হিজরী শতকে ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনঃ ১৯৩০ ঈসায়ীতে (১৩৪৮ হিজরী) ওহাবী রাষ্ট্র সউদী আরব প্রতিষ্ঠার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালিত হতো। যেমন পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পত্রিকা আল ক্বিবলা পত্রিকা মতে- “পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবাসীরা পালন করতেন যার নাম ছিল ‘ইয়াওম আল ঈদ মাওলিদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’। মুসলমান উনারা উত্তম খাবার রান্না করতেন।
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার আমীর এবং হিজাজের কমান্ডার তাঁর সেনাদের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রওযা শরীফ যিয়ারত করতেন এবং পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক পর্যন্ত আলোকসজ্জা করা হতো এবং দোকান-পাট সুসজ্জিত করা হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের বরকতময় স্থান মুবারক-এ সকলে মিলে পবিত্র ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার রাতে বাদ ইশা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের লক্ষ্যে একত্র হতেন। পবিত্র ১১ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার মাগরীব থেকে পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার আছর নামায পর্যন্ত প্রতি নামাযের পরে ২১ বার তোপধ্বনি দেওয়া হতো।” (মাসিক তরিকত- লাহোর : জানুয়ারী ১৯১৭ ঈসায়ী (১৩৩৫ হিজরী), পৃষ্ঠা ২-৩)
সুতরাং রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বাবস্থা আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং উনাকে মুহব্বত করা উনার প্রতিটি বিষয়ে খুশি হওয়া, খুশি প্রকাশ করা আমাদের জন্য ফরজ নাহলে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত সহ কিছু পরিপূর্ণ ভাবে আদায় করেও মুমিন হওয়া যাবেনা।
উদাহরনস্বরূপঃ একবার নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- “সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশি প্রিয় হই অর্থাৎ সে যদি তার পিতা এবং পুত্র হতে আমাকে বেশি মুহব্বত না করে।’ অন্য হাদিস শরীফেও এসেছেঃ তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা, সন্তান ও সমস্থ মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই অর্থাৎ তুমরা যদি তোমাদের পিতা এবং পুত্র এবং সমস্থ মানুষ হতে আমাকে বেশি মুহব্বত না করো। অন্য আরেকটি হাদিস শরীফে এসেছেঃ তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে পিতা, সন্তান ও সমস্থ মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই অর্থাৎ তুমরা যদি তোমাদের পিতা এবং পুত্র এবং সমস্থ মানুষ হতে আমাকে বেশি মুহব্বত না করো।
সূত্রঃ বুখারি শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ১৩/১৪/১৫/ ও মুসলিম শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ১৭৮। আরো দেখতে পারেনঃ মুসলিম শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ৪৪ এবং মিশকাত শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ৭।
যাইহোক উপরের হাদিস শরীফ খানা যখন রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করছিলেন তখন ঐ সময় হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম তিনি রাসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জীবন ব্যতীত আপনি আমার নিকট সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়। তখন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বললেন, না, যাঁর হাতে আমার প্রাণ ঐ সত্তার কসম! আপনার কাছে আমি যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয় না হবো ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি পূর্ণ মুমিন হতে পারবেন না। তখন হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও বেশী প্রিয়। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম এখন আপনি সত্যিকারের ঈমানদার হলেন।
সুত্রঃ বুখারী শরীফঃ হাদিস শরীফ নং ৬৬৩২ শপথ ও মানত অধ্যায়।
ব্যখাঃ উপরের হাদিস শরীফ এর ব্যখা হচ্ছে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তখন রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলেন যে ইয়া রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমি সবকিছু থেকে আপনাকে বেশি মুহব্বত করি কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি আমার জীবনের থেকে আপনাকে বেশি মুহব্বত করতে পারিনি। উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বলেছিলেন, হে হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম, সেক্ষেত্রে আপনি এখনও ঈমানদার হতে পারেননি।
নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুখে এই কথা শুনে হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম তিনি কাঁদতে লাগলেন, একদম শিশুর মতো কাঁদতে লাগলেন। নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন উনাকে নিজের কাছে ডাকলেন, উনার বুকের উপর হাত মুবারক স্থাপন করলেন। ফয়েজে ইত্তিহাদী প্রদান করলেন। সাথে সাথে হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম সচকিত হয়ে বললেন, এখন আমি শুধু একজন উমর ই নই, আরো শত-সহস্র উমর আপনার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। সুবহানআল্লাহ!!
আমি আমার পূর্বের অনেক পোস্টে আলোচনা করেছিলাম নিসবত বা সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে। দ্বীন ইসলাম হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে নিসবত স্থাপনের ধর্ম। এই নিসবত কিভাবে স্থাপিত হয়? হযরত ফারূকে আজম আলাইহিস সালাম উনার নিসবত স্থাপিত হয়েছিল উনার বুকের উপর রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাত মুবারক স্থাপনের মাধ্যমে। হযরত সিদ্দীকে আক্ববর আলাইহিস সালাম তিনি যখন মিরাজ শরীফর ঘটনাকে বিনা দ্বিধায় মেনে নিলেন, তখন উনাকে‘সিদ্দীক’ উপাধি দেয়া হলো। এর মাধ্যমে উনার নিসবত স্থাপিত হল।
উল্লেখ্য, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে এই নিসবত স্থাপন করলে তা কখনো বৃথা যায় না, এমনকি ফাসিক কিংবা কাফির হলেও না। বুখারী শরীফের একখানা সহিহ হাদীস শরীফ রয়েছে আবু লাহাবকে নিয়ে। তাতে রয়েছে, রইসুল মুফাসসিরিন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেছেনঃ যে আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর আমি তাকে স্বপ্নে দেখলাম, সে তখন জাহান্নামের আগুনে জ্বলছে আমি দেখতে পাই সে অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু লাহাব, তুমি কেমন আছ?
সে উত্তর দিল, আপনাদের ছেড়ে আসার পর আমি এতটুকু শান্তি পাইনি, কিন্তু প্রতি সোমবার আমার এই কষ্ট লাঘব করা হয়। কারণ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেদিন জন্মগ্রহন(বিলাদত শরীফ/মীলাদুন নবী) করেন সেদিন ছিলো সোমবার আর উনার আগমন সংবাদ নিয়ে এসেছিল আমার বাঁদী হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তখন আমি আবু লাহাব, আমার ভাতিজার আগমন সংবাদে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে দুই আঙ্গুলের ইশারায় আজাদ করেছিলাম এবং নির্দেশ দিয়েছিলাম দুধপান করানোর জন্য। সে জন্য প্রতি সোমবার আমার এই দুই আঙ্গুলের ফাঁক থেকে বেহেশতী নহরের সুমিষ্ট ঠাণ্ডা পানি প্রবাহিত করা হয়। সেই পানি আমি চুষে পান করলে আমার এক সপ্তাহের আযাবের কষ্ট আমি ভুলে যাই। দলিল সূত্রঃ (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ৯ম খ-, ১১৮ পৃঃ ওমদাতুল ক্বারী, শরহে বুখারী ২য় খণ্ডের ৯৫ পৃষ্ঠা) (https://sunnah.com/bukhari/67/39)
অর্থাৎ আবু লাহাব এই যে একটি নিসবত স্থাপন করলো নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনে(আমাদের মতো নবী হিসেবেও করেনি করেছিলো ভাতিজা হিসেবে) খুশি প্রকাশ করে, এর কারণে সে কাফির হয়েও জাহান্নামে ঠিকই প্রতি সোমবার বেহেশতী নহরের পানি পান করতে পারছে। অর্থাৎ নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে আমরা নবী হিসেবে পেলাম, তিনি যে দুনিয়াতে আগমন করলেন, এই জন্য খুশি প্রকাশ করলে উনার সাথে নিসবত স্থাপিত হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ- প্রতিটা ব্যবসার একটা মৌসুম থাকে, মুসলমানদের পরকালে নাজাত প্রাপ্তির সবচেয়ে বড় ব্যবসা হচ্ছে এখন এই ঈদে মীলাদুন নবী অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উদযাপন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ (فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ) সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং তোমরা আমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করো; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ – সূরা বাকারা শরীফঃ আয়াত শরীফ ১৫২।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন উনার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য, এখন আমাদের জানা উচিৎ উনার নেয়ামত কি? যার শুকরিয়া আমরা আদায় করব। আসুন দেখি মহান আল্লাহ পাক তিনি বা রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এই ব্যপারে আমাদের কোনো কিছু কুরআন শরীফে বা হাদিস শরীফে বলেছেন কি না?
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফে মুসলমানদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পবিত্র সূরা ইউনুস উনার ৫৭ ও ৫৮ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
[يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ]
অর্থঃ “হে মানবজাতি, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নসীহতকারী, অন্তরের শিফা দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত ও হিদায়েত দানকারী আগমন করেছেন।
হে আমার হাবিব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি বলেদিন সুতরাং তোমরা এই ফযল ও রহমত লাভ করার কারনে খুশি প্রকাশ করো, যা তোমাদের সঞ্চিত সমস্ত নেক আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবে।”
এখানে পবিত্র আয়াতে কারীমার সর্বশেষ অংশেই মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক ব্যবসার কথা সরাসরি মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে- ‘নিশ্চয় এ খুশি প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম।”
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ধরণের সঞ্চয় জমা সব থেকে উত্তম। আমরা কি জমা করি? দুনিয়াবী ধন সম্পদ, টাকা পয়শা সঞ্চয়ের তো কোন মূল্য নেই। মৃত্যুর সাথে সাথেই এসবের মালিকানা চলে যায়। পরকালের সঞ্চয় হচ্ছে নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত, দান-সদকা, সদক্বায়ে জারিয়া, নেক সন্তানের দোয়া ইত্যাদি। যদি মহান আল্লাহ কবুল করেন তাহলে পরকালের জন্য তা জমা থাকে।
তাহলে পবিত্র আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক যে ব্যবসার কথা বললেন যেটা এসকল ইবাদত বা সঞ্চয়ের চেয়েও অধিক উত্তম তথা লাভ জনক সেটা কোনটা?
এবার সেই সুমহান ব্যবসার ব্যাখ্যায় আসি। আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘ফালইফরহু’ শব্দের অর্থ ‘খুশি প্রকাশ’ তথা ঈদ উদযাপন। অর্থাৎ আমরা যে মহান আল্লাহ পাক উনার অত্যন্ত দয়া ইহসানের কারণে আখেরী নবী নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়েছি এজন্য যেন আমরা অত্যন্ত জওক শওকের সাথে খুশি প্রকাশ বা ঈদ ইদযাপন করি। এই খুশি প্রকাশ তথা (সাইয়্যিদুল আ”ইয়াদ শরীফ ( সমস্ত ঈদের সাইয়্যিদ) পালন করাটাই হবে ইহকাল ও পরকালের জন্য যা কিছু জমা করা হয় তারচেয়ে উত্তম বা লাভজনক ব্যবসা)।
এবার বলুন- নবীজী উনাকে পাওয়ার কারণে খুশি প্রকাশ বা ঈদ উদযাপন করবেন কিনা?
বলা বাহুল্য, এই খুশি প্রকাশের ইবাদত কিন্তু এতোটাই শক্তিশালী ও টেকশই যে কোন কুফরি এই ব্যবসার লাভ নষ্ট করতে পারেনা। অর্থাৎ কেউ যদি আবু লাহাবের মতো কুফরি করে করেও মারা যায় অর্থাৎ কাফির হয়ে মরে তারপরেও সে পরকালে আবু লাহাবের মতোই খুশি প্রকাশের বদলাটি ঠিকই লাভ করবে। এই খুশি প্রকাশের পুরস্কার স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এবার উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরিফ উনার তাফসির জেনে নিনঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই আয়াত শরিফ উঁনার তাফসীরে বলেন এখানে খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাঁক তিনি উঁনার অনুগ্রহ (ফাদ্বলুল্লাহ) দ্বারা ইলমে দ্বীন কে বুঝিয়েছেন আর (রহমত) দ্বারা সরকারে দু’আলম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনাকে বুঝানো হয়েছে।
দলিল সুত্রঃ তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে কবির ও ইমাম সূয়ূতী কৃত তাফসীর-ই আদ দুররুল মুনছুর, ৪র্থ খন্ড- ৩৬ পৃষ্ঠায় ও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
পবিত্র সুরা ইউনুস শরিফ উনার ১১ পারার ৫৮ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেনঃ- কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ- (يايها الناس قد جاءتكم موعظة من ربكم وشفاء لما فى الصدور وهدى ورحمة للمؤمنين. قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خير مما يجمعون) হে মানবজাতি, তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নসীহতকারী, অন্তরের শিফা দানকারী এবং মু’মিনদের জন্য রহমত ও হিদায়েত দানকারী আগমন করেছেন। সুতরাং তোমরা এই ফযল ও রহমত লাভ করার কারনে খুশি প্রকাশ করো, যা তোমাদের সঞ্চিত সমস্ত আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবে। (সূরা ইউনূস শরীফঃ ৫৭, ৫৮ নং আয়াত শরীফ)
পাঠকগন লক্ষ্য করুন ৫৭ নং আয়াত শরীফে যাঁর আগমনের কথা বলা হয়েছে, সমস্ত বিশুদ্ধ তাফসীর এর কিতাব অনুযায়ী নিঃসন্দেহে তিনি হলেন নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যাঁর আগমন উপলক্ষ্যে খুশী হওয়া বা আনন্দ উদযাপন করাটা ৫৮ নং আয়াত শরীফ অনুযায়ী خير مما يجمعون অর্থাৎ আমাদের জমাকৃত সমস্ত নেক আমল থেকে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম বলা হয়েছে। এটি এমন এক আমল, আবু লাহাবের মতো কাট্টা কাফির মালউন এর কুফরীও যাকে মিটিয়ে দিতে পারে নাই।
আর ঈদে মিলাদুন্নবি পালনের জন্য উপরের বর্নিত আয়াত শরীফ এর হুকুম যেই ভাষায় প্রয়োগ করা হয়েছে, পবিত্র কোরআন শরীফ এর অন্য কোথাও এমনিভাবে জোর তাগিদের সাথে হুকুম আসেনি। একটূ ফিকির করলেই এই আয়াত শরীফ এ ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের জন্য কমপক্ষে ১০ টি তাগিদ রয়েছেঃ-
১) قُلْ – قُلْ (কুল) শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে কোন কথা শুরু করা হলে, ইহাই এক প্রকারের জোর তাগিদ । যার উদ্ধেশ্য এই যে আপাদ-মস্তক নিমগ্ন হয়ে যাও।
২) بِفَضْلِ اللّهِ আল্লাহ পাক উনার ফজলের কারনে। প্রশ্ন তৈরি হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার ফজলের কারন কি? এই ফজল নবিজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কারন নবিজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় না আসলে আমরা কোরআন শরীফ পেতামনা মুসলমান ও হতাম না। তাই এই ফযল ও তাগিদ।
৩) وَبِرَحْمَتِهِ – মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের কারনে। প্রশ্ন হল রহমতের কারন কি? রহমত কে? ইহাও ৩য় তাগিদ।
৪) بِفَضْلِ اللّهِ وَبِرَحْمَتِهِ – ফযল ও রহমত একত্রীকরন। ফজলের পরে রহমতের উল্লেখ করাও তাগিদ।
৫) فَبِذَلِكَ – জালিকা (ذَلِكَ) এর পরে ফা-কে এজাফত(সম্মান) করা হয়েছে। ‘ফা’ – আরবী কাওয়ায়েদ অনুযায়ি তাগিদের জন্য ব্যবহৃত হয় বা তাগিদের জন্য আসে।
৬) بِذَلِكَ – ফজল ও রহমত এর উল্লেখ করার পরে ইশারা বায়িদ লওয়াও তাগিদের অন্তর্ভুক্ত।
৭) فَلْيَفْرَحُو – ‘ফালইয়াফরাহু’ শব্দের উপর পুর্ন ‘ফা ‘ হরফ এজাফত করা হয়েছে, যার ফলে তাগিদ করা হয়েছে।
৮) فَلْيَفْرَحُو – ইয়াফরাহু এর উপর ‘লাম’ ও তাগীদের জন্য হয়ে থাকে।
৯) هُوَ خَيْرٌ – এখানে ‘হুয়া ‘ তাগিদের জন্য এসেছে।
১০) مِّمَّا يَجْمَعُونَ – “মিম্মা ইউয়াযমাঊন” ইহাও তাগীদের কালাম।
বর্নিত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ১০ তাগিদের সাথে যে হুকুম প্রদান করেছেন ইহা এই যে, فَلْيَفْرَحُو – ‘ফালইয়াফরাহু’ – খুশি পালন কর অর্থাৎ ঈদ পালন কর। কেননা فَبِذَلِكَ – “ফাবিজালিকা” শব্দ দ্বারা যেই রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কথা বলা হয়েছে, তিনি আগমন করেছেন উনার পরে আর কোন নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম আগমন করবেন না।
উপরোক্ত ১০ তাগীদের পরে বিষয়টি এমন চুড়ান্ত পর্যায়ে এসেছে যে এই খুশি প্রকাশ করা সমস্ত নেক আমল(কবুলকৃত) থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ হবার ঘোষনা স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!!!
এখন এই খুশি প্রকাশ অর্থাৎ ঈদে মীলাদুননবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কেউ পালন না করে, বিরোধীতা করে তাহলে তার জীবনের কোন আমল কাজে আসবে কি ?
সে কি আল্লার বান্দা, নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে পরিচয় দিতে পারবে?
এর পরেও অনেক গুমরাহ আছে তারা বলে “রহমত” দ্বারা নাকি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়নি। নাউযুবিল্লাহ
এতএব যারা রহমত হিসেবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অস্বীকার করতে চায় তারা কি জানেনা সেরা রহমত কে?
একথা তো খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাঁক তিঁনি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেনঃ- [وَمَا أَرْسَلْنَاكَإِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ] (সূরা আম্বিয়া শরিফ উনার ১০৭ নং আয়াত শরিফে) আমি আপনাকে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সমস্থ কায়েনাতের জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামান নাবীঈন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিঁনি আমাদের জন্য খাস রহমত। আর মহান আল্লাহ পাঁক তিঁনি সুরা ইউনুস শরিফ উনার ৫৮ নং আয়াত শরিফে এ রহমত পাওয়ার কারনেই খুশি প্রকাশ করতে বলেছেন যা আমাদের জমাক্রিত সমস্থ সবকিছু হতে উত্তম দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনে।
এতএব আমার আর কিছুই বলার নাই যারা মনে করেন ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থাৎ নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের দিনে শরীয়ত সম্মত উপায়ে হালাল পন্থায় খুশী প্রকাশ করা ফরজ তারা পালন করুন আর যারা মনে করেন প্রয়োজন নাই তারা টিভি সিনেমা গান বাজনা প্রেম পিরিতি ডেটিং ফেটিং করে ১২ই রবিউল আউয়াল কে ইগোনোর করেন তাতে আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকারীরা কাউকে বাঁধা দেবনা, কারন নেক আমল হোক আর বদ আমল হোক যাই করেন তা আপনি একাই ভোগ করবেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো রহমাতুল্লিল আলামীন। তিনি কুল কায়িনাতের সকলের জন্য রহমত। উনার শান-মান, মর্যাদা মুবারক এমন যে, যে ব্যক্তি উনার সম্পর্কে মুবারক আলোচনা করবে, উনার ছানা-ছিফত করবে সেই ব্যক্তিই মর্যাদাবান হয়ে যাবে! সুবহানাল্লাহ।
যিনি সকল নবীর উপর আলাদাভাবে এবং এককভাবে বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব মুবারকের অধিকারী যা কুল কায়িনাতের আর কাউকে দেয়া হয়নি হবেও না…
উনার উম্মত হওয়ার জন্য সমস্ত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা আরজু করেছিলেন উনার শান-মান মর্যাদা মুবারক বুঝেই। তবে মহান আল্লাহ পাক শুধু হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার আরজু কবুল করে উনাকে উম্মত হিসেবে শেষ যামানায় প্রেরণ করবেন। সুবহানাল্লাহ!
বুঝা যায় কি? একজন সম্মানিত রসূল(ঈসা আলাইহিস সালাম) তিনি কখন আরেকজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হতে চাইতে পারেন? তিনি কত সুমহান মর্যাদা মুবারকের অধিকারী হতে পারেন…! সুবহানাল্লাহ।
বুঝা যায় কি… যিনি রহমাতুল্লিল আলামীন তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কত মাহবুব হলে মহান আল্লাহ পাক পূর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের নিকট জানিয়েছেন শেষ নবীর আগমনের কথা…
কফিল পাদ্রী তাওরাত শরীফে আগমনের পূর্বেই মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার চেয়ে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত বেশি দেখে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক তাওরাত শরীফ থেকে কেটে দিয়েছিল! নাঊযুবিল্লাহ!
হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো তখন জাহিরীভাবেও ছিলেন না! শুধুমাত্র এই নাম মুবারকের সাথেই বেয়াদবী মহান আল্লাহ পাক তিনি তো বরদাশত করলেন না! তাকে গুঁইসাপ বানিয়ে দিলেন। নাঊযুবিল্লাহ!
অবশ্য পরে গুঁইসাপ কফিল পাদ্রী ক্ষমার আরজু করেছিলেন। তাকে তখনই ক্ষমা করা হয়েছিলো যখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জাহিরীভাবে দুনিয়ায় মুবারক অবস্থানকালীন সময়ে কেবল উনার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ।
মহান আল্লাহ পাক মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া কবুল করে কফিল পাদ্রীর হায়াত বৃদ্ধি করেছিলেন।
অপরদিকে বনী ইসরাইলের লোকটা ২০০ বছরের চরম গুনাহখতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র সেই মুবারক নাম(মুহম্মদ) তাওরাত শরীফে দেখে সম্মান করেছিলেন, মুহব্বতের সাথে বুছা দিয়েছিলেন বলে, মহান আল্লাহ পাক এতো খুশি হলেন যে তার ২০০ বছরের গুনাহ ওয়ালা চরম বদকার লোকটাকে কবুল করে নিলেন। সুবহানাল্লাহ!
বুঝা যায়???
যে সুমহান ব্যক্তিত্ব মুবারক উনার মুবারক নামই এতো সম্মানিত তিনি কত সম্মানিত হতে পারেন??????
আর যেদিন হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে আগমন করবেন এই বিষয় যদি মহান আল্লাহ পাক প্রত্যেক ক্বওমের নিকট ওহী মুবারকের মাধ্যমে জানিয়ে দেন তাহলে কি এটা বুঝা যায় না তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ??? তাহলে উনার আগমনের যেই মুবারক দিবস, ক্ষণ সেই দিনটি, ক্ষণটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ!!!
বান্দা সসীম আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শান-মান অসীম যা বান্দার ক্ষুদ্র মগজের ক্ষুদ্র চিন্তা দ্বারা কল্পনা করা অসম্ভব…
তবে কিছুটা আন্দাজ করা তো অসম্ভব না। আল্লাহ পাক তো নজীর কায়িনাতবাসীর সামনে রাখলেনই…কফিল পাদ্রী ও বনী ইসরাইলের ২০০ বছরের গুনাহগার বান্দা।
নসীহত গ্রহণ করতে চাইলে এই দুই ব্যক্তিই তো যথেষ্ট…। তবে আর হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে খুশি প্রকাশের বিরোধীতা কেন?
মূলত নিরেট মূর্খ ব্যতীত কেউ বিরোধীতা করতে পারে না…। এতএব যারা মূর্খের মতো পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফের বিরোধিতা করে তারা কাট্টা কাফের মালউন ইবলিশের কায়িম মাকাম ব্যতিত কিছুই না।
আর পবিত্র মীলাদুন নবীর দিনের খুশীর বেলায় নয় যখন কোন মৃতের বাড়ীতে, মৃত্যু দিবসে, বিয়ের দিন, বা কোন শুভ কাজের প্রারম্ভে মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয় তখন ইহাকেও যারা বিদয়াত বলে চালিয়ে দিতে চায় তারা যে কত বড় মুরতাদ তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না।
এবার আসুন পবিত্র মিলাদ শরীফ আসলে কিভাবে পাঠ করে তা দেখিঃ পাক পবিত্র হয়ে অজু করে ইমাম সাহেব একা অথবা একাধিক মিলে আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ্ সহ (সূরা তাওবা শরিফ, আয়াত শরীফ ১২৮, ১২৯) এবং (সূরা আহযাব শরিফ আয়াত শরিফ ৪০) ও (সূরা আহযাব শরিফঃ আয়াত শরিফ ৫৬) এই আয়াত শরিফগুলো তেলাওয়াত করে মুহব্বতের সাথে নিজের জানা দরূদ শরীফ পাঠ করে দুরূদ শরীফের সাথে মিলিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন যতক্ষন পারেন।
তারপর তারপর আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ্ সহ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্মবৃত্তান্ত আরবিতে আলোচনা করেন যাকে তাওয়াল্লুদ শরীফ বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ায় কিভাবে আগমন করেছিলেন ইহার সংখিপ্ত আলোচনা।
পবিত্র জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা শেষ হলে সম্মানের সহিত দাঁড়িয়ে সালাম দেন এভাবেঃ ছল্লাল্লাহু আলা রাসুলিল্লাহ – ছল্লাল্লা হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ছল্লাল্লা হু আলা হাবিবাল্লাহ – ছল্লাল্লা হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ।
আস-সালামু-আলাইকুম ইয়া রাসুলাল্লাহ আস-সালামু-আলাইকুম ইয়া নাবিয়াল্লাহ আস-সালামু-আলাইকুম ইয়া হাবিবাল্লাহ সালাওয়া তুল্লা আলাইকুম।
সময় এবং মানসিক তৃপ্তি হলে সালাম শেষ করে বসে পড়েন। তারপর বেজোড় সংখ্যায় যতক্ষণ মানসিক তৃপ্তি যায় তওবা শরীফ পাঠ করে দোয়া করেন।
এই হলো মিলাদ শরীফ যা তারা হারাম আর বিদয়াত বলে ফতোয়া দেয়। নাউযুবিল্লাহ!!!
এবার আসুন জেনে নেই একা বা মিলিত হয়ে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ অথবা কোন একটি সূরাহ বা আয়াত শরীফ পাঠ করার হুকুম এবং ফজিলত।
মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ [إِنَّ الَّذِينَ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَأَنْفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرّاً وَعَلانِيَةً يَرْجُونَ تِجَارَةً لَنْ تَبُورَ، لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ] “যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব(কুরআন শরীফ) পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরো অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান। [সূরাহ ফাতির শরীফঃ ২৯-৩০]
আর হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেনঃ আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ يَتْلُونَ كِتَابَ اللَّهِ وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمْ السَّكِينَةُ وَغَشِيَتْهُمْ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمْ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمْ اللَّهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ)
বাংলা অর্থঃ যে কোন সম্প্রদায় মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তিলাওয়াত করে এবং নিজদের মাঝে তা পঠন ও পাঠন করে, তাদের উপর শান্তি অবতীর্ণ হয়, মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত তাদের ঢেকে রাখে, ফেরেশ আলাইহিমুস সালাম উনারা তাদের বেষ্টন করে রাখেন এবং মহান আল্লাহ তাআলা তিনি উনার নিকটস্থ ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে আলোচনা করেন।” সুবহানাল্লাহ!!! আর সম্পূর্ণ ফজিলত বিস্তারিত দলিল সহ পড়তে লিঙ্কে যেত পারেন। [http://bit.ly/2pF8br3]
এবার আসুন জেনে নেই একা বা মিলিত হয়ে দূরুদ শরীফ পাঠ করার হুকুম এবং ফজিল।
খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেনঃ [إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا] নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক ও উনার ফেরেশতা আলাইহিমাস সালামগন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি স্বলাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও উনার( সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি স্বলাত-দরুদ পেশ করো এবং উনাকে (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথাযথভাবে সালাম জানাও।” (সূরা আহযাব শরীফঃ আয়াত শরীফ ৫৬)
আর হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ শরীফ পাঠ করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উহার কারনে তার উপর দশবার দুরুদ পাঠ করবেন।” সুবাহানাল্লাহ (মুসলিম শরীফ)
ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে।” (তিরমিযী শরীফ)
আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে পবিত্র জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ শরীফ পাঠ করবে। কেননা, তোমাদের দরূদ শরীফ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি তো (বিসাল শরীফের পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। নাউযুবিল্লাহ, সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ শরীফ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। (অর্থাৎ সমস্থ পয়গম্বরগণ নিজ নিজ রওজা শরীফে জীবিত বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাউদ শরীফ)।
প্রমান হলো যে একা বা সম্মিলিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত এবং দূরুদ শরীফ পাঠ করার হুকুম স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক এবং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দিয়েছেন যা বেমেসাল ফজিলতের কারন দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অথচ এই হুকুম কে হারাম আর বিদয়াত বলে ফতোয়া দেনে ওয়ালা যদিও নিজেদের পবিত্র দ্বীন ইসলামের ঠিকাদার মনে করে কিন্তু হক্বিকতে এরা কাফের মুশরিক আবু লাহাবের চেয়েও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত।
আর অনেকে জিজ্ঞেস করেন কিভাবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবেন, কারন ঈদে মীলাদে হাবীবী একটি পরিপূর্ণ শরীয়ত সম্মত ও নিয়ামতপূর্ণ আমল।
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক আমল যে আমলে অগনিত নিয়ামতের সম্ভার রয়েছে। ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের মাধ্যম দিয়ে মানুষ এসকল নেক কাজ করার সুযোগ ও বিশাল নিয়ামত লাভ করতে পারে। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, [مَنْ سَنَّ فِي الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ]
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম শরীফ – কিতাবুজ যাকাত : হাদীস ১০১৭, সুনানে নাসাঈ ২৫৫৪, জামে তিরমিযী – কিতাবুল ইলিম : হাদীস শরীফ ২৬৭৫ )
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে কাজ করা হয় তা সবই উত্তম। আসুন দেখা যাক কি করা হয়,
১) কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হয়ঃ ‘ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে কোরআন শরীফ পাঠ করা। তিনি আরো বলেন, তোমরা কুরআন শরীফ পড়। কারণ কিয়ামতের দিন এই কোরআন স্বীয় পাঠকের জন্য সুপারিশ করবে।’ (মুসলিম শরীফ)
২) ছলাত পাঠ করা: পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছেঃ- [عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اولى الناس بى يوم القيامة اكثرهم على صلوة]
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ওই ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার প্রতি অধিক মাত্রায় পবিত্র ছলাত শরীফ (পবিত্র দুরূদ শরীফ) পাঠ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফঃ আবওয়াবুল বিতরঃ হাদীস ৪৮৪)
৩) সালাম পাঠ করা: পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
[يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما]
অর্থ: “তোমরাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করার মতো প্রেরণ করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
৪) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা সিফত করাঃ [اِنَّا اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيرًا. لِّتُؤْمِنُوْا بِاللهِ وَرَسُولِه وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ وَتُسَبِّحُوْهُ بُكْرَةً وّ َاَصِيلا.]
অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি; যেন (হে মানুষ!) তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম করো এবং উনার ছানা-ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা। (সূরা ফাতহঃ আয়াত শরীফ ৮, ৯)
৫) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ বিষয়ে আলোচনা করা: “মেশকাতুল মাছাবীহ-এর ৫১৩ পৃষ্ঠায় “ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন” নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
[عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم- انه قال انى عند الله مكتوب خاتم النبيين وان ادم لمنجدل فى طينة وساخبركم باول امرى دعوة ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت حين وضعتنى وقد خرج لها نور اضاء لها منه قصور الشام]
অর্থঃ- “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর খামীর যখন প্রস্তুত হচ্ছিল তখনও আমি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট “খতামুন্নাবিয়্যীন” অর্থাৎ “শেষ নবী” হিসেবে লিখিত ছিলাম। এখন আমি তোমাদেরকে আমার পূর্বের কিছু কথা জানাব। তা হলো, আমি হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমি আমার মাতার সুস্বপ। আমার বেলাদতের সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা “নূর মুবারক” বের হয়ে শাম দেশের রাজপ্রাসাদ বা দালান-কোঠা সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।” (সহীহ ইবনে হিব্বান: হাদীস ৬৪০৪, মুসতাদরেকে হাকীম: হাদীস ৩৬২৩, সিয়ারু আলামীন আননুবুলা পৃষ্ঠা ৪৬, মুসনাদে তয়লাসী: হাদীস ১২৩৬, মুসনাদে বাযযার ৪১৯৯, দালায়েলুন নুবুওওয়াত-১ম খন্ডের ৮৩ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান-২য় জিঃ, ১৩৪ পৃষ্ঠা, শরহুসসুন্নাহ ও মসনদে আহমাদ)
৬) মানুষকে খাবার খাওেয়ানো: হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে,
[عن حضرت عبد الله بن سلام رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يايها الناس افشوا السلام واطعموا الطعام وصلوا الارحام وصلوا باليال والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام]
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী ১৮৫৫, ইবনে মাযাহ্ ১৩৯৫, আদাবুল মুফাররাদ ৯৮১, আবদ ইবনে হুমাইদ ৩৫৫, দারিমী)
৭) আগমন দিবস স্মরন করা: আর এমন বিশেষ দিন সমূহ স্মরন সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
[وَذَكِّرْهُم بِأَيَّامِ اللَّـهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُورٍ]
অর্থ: তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা ইব্রাহিম ৫) ফিকিরের বিষয় হচ্ছে , নবীজীর আগমনের দিবস কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ। এই দিন হচ্ছে অন্য সকল দিনের চাইতেও শ্রেষ্ঠ। আর এমন দিনের স্মরন করানোর আদেশ আল্লাহ পাক নিজেই দিয়েছেন। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী এই বিশেষ দিন স্মরন করা, সে দিনের বিশেষ ঘটনাবলী আলোচনা করা, সে দিন যার কারনে শ্রেষ্ঠ হলো উনার ছানা সিফত করা, শুকরিয়া আদায় করা এটা আল্লাহ পাকের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা দেখতে পেলাম, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে আমারা যে আমল করি সেগুলো প্রতিটি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ সম্মত।এবং সবই উত্তম ও নিয়ামত সমৃদ্ধ, এবং আল্লাহ পাকের আদেশের অর্ন্তভূক্ত। তাই এই সুমহান আমলের বিরোধীতা করা কোন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব না। সূতরাং প্রমাণ হলো, আমরা পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে আমল করি সবই কুরআন শরীফ সম্মত।
শেষ করার আগে কয়েকটি কথা বলে শেষ করছি। কিছু “জাহেলে মুরাক্কাব” মানে গন্ড মুর্খ আছে যারা প্রশ্ন করে নবীজি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি প্রতি বছর আগমন করেন নাকি? তাহলে প্রতি বছর তোমরা কেন মিলাদুন নবী পালন কর?
তাদের কাছে আমার কয়েকটি প্রশ্ন-
কোরআন শরীফ কি প্রতি বছর নাজিল হয়? তাহলে কোরআন শরীফ নাজিলের কারনে প্রতি বছর শবে কদর পালন করতে হয় কেন?
প্রতি বছর মহররমের দশ তারিখে কি মূসা (আলাইহিস সালাম) ও উনার উম্মতরা ফেরাউনের হাত থেকে নাজাত পান? তাহলে সেই নাজাত পাওয়ার খুশিতে আজও আশুরার রোযা রাখতে হয় কেন?
মা হাজেরা আলাইহাস সালাম কি প্রতিবছর সাফা-মারওয়া শরীফ দৌড়াদৌড়ি করেন? তাহলে উনার এই আমলের স্মৃতি সরুপ আজও হাজ্বীদের সাফা-মারওয়া শরীফ সাঈ করতে হয় কেন?
শয়তান কি প্রতি বছরই কোরবানী করতে বাধা দেয়? তাহলে প্রতিবছর হাজীদের জামারায় শয়তানকে পাথর মারতে হয় কেন?
এতএব এইসব উদ্ভট প্রশ্ন করে আর নিজেদের মূর্খতা কে জাহির করনা। এবং কুরআন সুন্নাহ ইজমা ক্বিয়াস শরীফ এর দলিল দিয়ে প্রত্যেক হিজরি শতকের পবিত্র মিলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের দলিল দেওয়ার পরেও যারা কুতর্ক করে তা অস্বীকার করবে নিস্বন্দেহে তারা পথভ্রষ্ট গুমরাহ।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের হক্ব বোঝার মানার আর পালন করার তৌফিক দিন আমিন সুম্মা আমিন।