ঘিওর (মানিকগঞ্জ)সংবাদদাতা ॥
মানিকগঞ্জের ঘিওরে উপজেলা নির্বাচনে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের ডিউটির অনুমতি পেতে হাজার টাকার উৎকোচ নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কমর্রত দলনেতাদের দিয়ে সিন্ডিকেট করে সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও ডিউটির নামে নানামুখী হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাধারণ আনসার সদস্যরা।
আগামি ২১ মে ঘিওর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে উপজেলার ৫৮টি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন ৬৯৬ জন আনসার সদস্য।
গত শনিবার যাচাই বাছাই শেষে আনসার সদস্যদের কেন্দ্রে ডিউটির জন্য তালিকা করা হয়। কিন্তু ডিউটি পেতে আনসার সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠে।
গতকাল রবিবার উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২০ জন আনসার সদস্যদের সাথে কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যায়।
সূত্রে জানা গেছে, যে সকল আনসার সদস্য উপজেলা নির্বাচনে ডিউটি করেছেন তাদের মধ্য অধিক সংখ্যক সদস্যকে ডিউটি নিতে সদস্য প্রতি ৮শ থেকে এক হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
নির্বাচনকালীন দুই দিনে দায়িত্ব পালন বাবদ প্রতি সাধারন সদস্য সম্মানী পাবেন ২ হাজার ৮৫০ টাকা। পিসি (প্লাটুন কমান্ডার) ও এপিসি (এসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডার) পদধারীরা পাবেন ৩ হাজার ১৫০ টাকা, নির্বাচনে উপজেলায় ৭ টি ইউনিয়নে ৫৮টি ভোট কেন্দ্রে ১২ জন করে ৬৯৬ জন আনসার সদস্য ডিউটি পালন করবেন। পুরুষ সদস্য ৪৬৪ জন এবং নারী আনসার সদস্য ২৩২ জন এবার নির্বাচনী কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন। এতে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা অর্থ বাণিজ্য হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনসার সদস্য জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন আনসার দলনেতা তিন গ্রুপে ৩৬ জনের নামের তালিকা দেওয়া হয় এবং প্রতিজনের জন্য ১ হাজার করে মোট ৩৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এভাবে একাধিক দলনেতার মাধ্যমে সাধারণ সদস্যরা টাকা দিয়ে নির্বাচনের ডিউটি কিনে নেন।
একাধিক আনসার সদস্য বলেন, টাকা না দিলে তাদের ডিউটি দেয়া হয় না। অফিস কর্মকর্তারা নানা ধরণের হয়রানি করেন। সাধারণ আনসার সদস্যরা নিরুপায়, ভয়ে কিছু বলতে পারি না।
ঘিওর সদর ইউনিয়ন আনসার দল নেতা (সহকারী কমান্ডার) ছায়া রানী ও সামেজ উদ্দনি বলেন, কারো কাছ থেকে কোনো টাকা নেইনি। আমার কয়েকজন আত্বীয় স্বজনকে ডিউটিতে নিয়োগ দিয়েছি ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্লাটুন কমান্ডার বলেন, অফিসের স্যাররা বলেছেন খরচ নিতে। কি কারনে এবং কোন খরচের জন্য তা আমি বলতে পারবো না। তবে সবার কাছ থেকে নেয়া হয় নাই। কয়েক জনের কাছ থেকে সামান্য কিছু নেয়া হয়েছে।
এভাবে আরও কয়েকজন সাধারণ আনসার সদস্য (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, গত সংসদ নির্বাচনে ডিউটি করে এখনও টাকা পাননি তিনি। অফিসে একাধিকবার গিয়েও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাকা না দেওয়ার কারণে অনেক সাধারণ আনসার সদস্য ডিউটি পালনের তালিকাভুক্ত হন নি। তাদের আক্ষেপ আনসারের প্রশিক্ষক নিয়ে অনেকবার নির্বাচনী ডিউটি পালন করেও এবার টাকার জন্য উপজেলা নির্বাচনে ডিউটিতে যেতে পারছেন না।
কিছু আনসার সদস্য ও দলনেতা জানান, নির্বাচনকালীন ডিউটি করতে অফিসে কিছু টাকা দিতে হয়। এখানে গ্রুপ ভাগ করে দিয়ে দলনেতাদের মাধ্যমে সাধারণ আনসার সদস্যদের কাছ থেকে অফিস টাকা নিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে টাকা দিয়ে ডিউটি কিনে নিচ্ছেন তারা।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম জানান, উপজেলায় একাধিক ইউনিটে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রায় তিন হাজার সাধারণ আনসার সদস্য রয়েছে। নির্বাচনকালীন সময়ে ডিউটিতে ভাতাভোগী দলনেতাদের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাধারণ সদস্য সংগ্রহ করা হয়। অর্থ নিয়ে ডিউটি দেয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা ফাতেমা আক্তার জানান, অর্থ বাণিজ্যের বিষয়ে আমি অবগত নই। ১৭ জন আনসার সদস্য ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ডিউটি নিতে এসছিলেন। তাদের নেয়া হয়নি। তারা হয়তো এমন মিথ্যাচার করতে পারে। তবুও বিষয়টি আমি গুরুত্বের সাথে তদন্তকরে দেখবো।