স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বিএনপি এখন আবারও অবরোধ করছে। জ্বালাও-পোড়াও করছে। বাস, গাড়ি পোড়াচ্ছে। পুলিশ হত্য করছে, মানুষ হত্যা করছে। হত্যা করে কখনও বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসতে হবে। যদিও বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। বিএনপি ক্ষমতার সময় দুর্নীতিতে পাঁচবার সেরা হয়েছিল।
শনিবার বিকেলে মানিকগঞ্জ শহরে সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য অর্জন উপলক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কোনো বাড়িতে এখন আর অন্ধকার নেই। প্রত্যেকটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। অথচ বিএনপির আমলে প্রতিটি বাড়িতে অন্ধকার ছিল। সে সময় বিদ্যুতের জন্য যখন দাবি তোলা হয়েছিল তখন গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় দেশে সারের অভাব হয়েছিল, লুটপাট করেছিল। এ কারণে খাদ্যে অভাব হয়েছিল। দেশে খাদ্য ঘাটতি হয়েছিল। এখন দেশে কোনো হারিকেনও নেই, কুপিও নেই। এখন কোনো বাঁশের ব্রিজও (সাঁকো) নেই। বাংলাদেশে কেউ না খেয়ে থাকে না। প্রত্যেকের মাথা গোজার ঠাঁই হয়েছে। জমিসহ ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত পাঁচ বছরে স্বাস্থ্যখাতে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগে দেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৪০ হাজার শয্যা ছিল। এখন তা বেড়ে ৭০ হাজার করা হয়েছে। দেশে ১০টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসার জন্য আটটি বিভাগে হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে মাত্র ৩০০ আইসিইউ ছিল, এখন ১ হাজার ৫০০টি আইসিইউতে উন্নীত করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে কোনো আইসিইউ ছিল না, ডয়ালাইসিস ছিল না। বর্তমানে প্রতিটি জেলায় ১০ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার ডাইলাসিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ছিল ৩ হাজার। এখন তা বাড়িয়ে ৫ হাজার ৫০০ আসন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের মানুষকে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মৃত্যু কম হয়েছে। দেশের ৯০ ভাগ মানুষকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। অথচ আশপাশে কোনো দেশ ভ্যাকসিন দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যেখানে কালাজ্বর নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। ফাইলেরিয়াসিস রোগও বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক (রিজিওনাল ডাইরেক্টর) নির্বাচিত হয়েছেন। এই প্রাপ্তি দেশের জন্য এক গৌরবময় অর্জন।
বিএনপির উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা কি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় আসতে চান। আপনারা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চান। আপনারা স্বাধীনতার সময় বিরোধীতা করেছেন। রাজাকার, আল-বদর সৃষ্টি করেছেন। আপনারই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছেন। আপনারাই ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট সৃষ্টি করেছেন। বিদ্যুত ও সার চুরি করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো খাদ্যের অভাব নেই। বাংলাদেশে এখন কেউ না খেয়ে থাকে না। বাংলাদেশে কোনো ভিক্ষুক দেখা যায় না। কেউ খালি পায়ে ঘুরে না, কেউ খালি গায়ে থাকে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে দারিদ্রের হার ৫ ভাগে নেমেছে। বিএনপির আমলে তা ছিল ৪০ ভাগ। বিএনপির সময় মানুষের মাথাপিছু গড় আয় ছিল ৬০০ ডলার। এখন তা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শান্তি ছাড়া কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিএনপির ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করেছিল। আজকে বিএনপি পোশাকশিল্পকে অস্তিরতায় ফেলে দিয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানিকগঞ্জে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবেন না। মানিকগঞ্জে বাস পোড়ানোর চেষ্টা করবেন না। মানিকগঞ্জের মানুষকে ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে বিএনপিকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, সহসভাপতি আবদুল মজিদ, মো. রমজান আলী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকার এবং মানিকগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরশেদ আলী বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পদাক জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।