বিশেষ প্রতিবেদক

নদীতে পানি বাড়ায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন আতংকে রয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার নদী পাড়ের বাসিন্দারা। উপজেলার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ইছামতি, কালীগঙ্গা আর পুরাতন ধলেশ্বরী নদী তীরবর্তী কমপক্ষে ২শত পরিবার ভাঙন আতংকে দিন পাড় করছেন। কালীগঙ্গা নদীতে ভাঙন কিছুটা শান্ত থাকলেও এরইমধ্যে ইছামতি আর পুরাতন ধলেশ্বরীতে শুরু হয়েছে দুপাড়ে ভাঙন।

     এ দিকে ইছামতি নদীর তীর রক্ষায় প্রকল্পের জিও ব্যাগ ফেলাসহ ৬০ লাখ টাকার কাজ চলমান থাকলেও ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। 

     উপজেলার ঘিওর সদর ইউনিয়নের পুরাতন গরু হাটা, বড় রামকান্তপুর, কুঠিবাড়ি, রসুলপুর, কুস্তা এলাকায় ইছামতি নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। আতংকে রয়েছে কমপক্ষে শতাধিক পরিবার। ইতোমধ্যে কয়েকটি বাড়ির অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে এবং হিজুলিয়া সংযোগ রাস্তা ভেঙে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছেন। হুমকির মধ্যে রয়েছে রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি, শত বছরের গরুর হাটসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা। 

     এলাকাবাসী জানান, বর্ষার শুরু থেকেই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে গত এক সপ্তাহ ধরে অবিরাম বর্ষণে ভাঙনের পাশাপাশি ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।  উপজেলার ঘিওর সদর, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া ও বড়টিয়া- এই চার ইউনিয়নে তিন নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে কমপক্ষে ২০০ পরিবারের বসতভিটা, স্থাপনা, হাট বাজার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বিস্তীর্ণ ফসসিজমি। 

     সরজমিনে উপজেলা সদরের পুরাতন গরু হাট, কুস্তা ও রসুলপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইছামতি নদীর ভয়অল গ্রাসের মুখে পতিত রয়েছে কমপক্ষে ২০টি বসত বাড়ি। ৫টি বসত বাড়ির অর্ধেক ও কুস্তা কফিল উদ্দিন দরজি উচ্চ বিদ্যালয় এবং ঘিওর গরুর হাটের অর্ধেক নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়াও বড় রামকান্তপুর, কুঠিবাড়ি এলাকায় এই নদীর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরো ৪০টি পরিবার। ভাঙন আতংকে এসব বাসিন্দারা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। কুস্তা ব্রীজ, ঘিওর-গোলাপ নগরের রাস্তা, বেপারীপাড়া কবরস্থান, রসুলপুর গ্রামের বসতবাড়ি, কবরস্থান, বেপারীপাড়া কবরস্থানটি ঝুঁকিতে রয়েছে। 

     ইছামতি পাড়ের কুঠিবাড়ি এলাকার মোস্তফা ও সহাদেব শীল বলেন, বসতবাড়িতে ভাঙন ধরেছে। পরিবার নিয়ে আতঙ্কে আছি। সারা রাত এক ফোটাও ঘুমাতে পারি না। কখন নদী সব নিয়ে যায়। 

     এ দিকে পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে শ্রীধরনগর, মাইলাগী, বাটরাকান্দি, ঘিওর পূর্বপাড়া, ঘিওর নদীর উত্তর পাড়ের বাজার, উপজেলা খাদ্য গুদাম, ব্রীজসহ ১২-১৩টি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। অপর দিকে কালীগঙ্গা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে উত্তর তরা কাঁচা রাস্তা ও পেঁচারকান্দা, বেনুরা, তরা মির্জাপুর, জাবরা, নকীব বাড়ি এলাকার কয়েকটি বসত বাড়ি ও ফসলি জমি। এই নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে অর্ধশত বসতভিটা, একটি বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, তরা শ্মশানঘাট, মন্দির, ১টি ব্রিজ, বাজার, রাস্তাসহ ফসলি জমি।  বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বৈলট-জাবরা সড়কের কোশুন্ডা এলাকার পাকা রাস্তা, পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ওপরে ব্রীজ, কমপক্ষ্যে ৫ একর ফসলী জমি ও ১৫টি বসত বাড়ি যে কোন সময় নদীগর্ভে চলে যাবার উপক্রম হয়েছে। 

     পুরাতন ধলেশ্বরী নদী পাড়ের পেঁচারকান্দা গ্রামের মনির হোসেন বলেন, বর্ষার শুরুতেই নদীর পানি বৃদ্ধি ও কয়েক দিনের বৃষ্টির ঢলে আমার কমপক্ষ্যে ২০ শতাংশ ফসলী জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। প্রতিবছরই নদী ভাঙে কিন্তু ভাঙন রোধে স্থায়ী কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। পুরাতন ধলেশ্বরী নদী পাড়ের কুশুন্ডা গ্রামের সাদেক মোল্লা বলেন, আসলে আমাদের কপালটাই খারাপ। প্রতি বছরই নদী ভাঙে। ভিটেমাটি হারা হয় মানুষ। ফসলী জমি ভেঙে অবস্থা সম্পন্ন মানুষ মূহুর্তেই বসে যায় পথে। সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।

     স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে  ইউনিয়নের দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, একটি বিদ্যালয়, অর্ধশত বসতবাড়ি ও বিস্তীর্ণ ফসলি জমি।

     উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি পর্যায়ে সহায়তা করা হবে।

     উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, ’ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের স্থানগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ডিসি মহোদয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ইতোমধ্যে ভাঙ্গন রোধে কাজ চলমান রয়েছে।

     মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাইন উদ্দিন বলেন, ভাঙনরোধে দুটি জরুরী প্রতিরক্ষামূলক প্রকল্পে ইছামতী নদীর দুপাড়ের ৩ টি স্পটে ৬০ লাখ টাকার কাজ চলমান রয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাঁশের পাইলিং করা হয়েছে। এখন ১০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর হিজুলিয়া, বেগুন নারচী ও শ্রীধরনগর এলাকায় ভাঙন রোধে অন্য একটি প্রকল্পে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।