মোঃ শফি আলম, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা :
মানিকগঞ্জের ঘিওরে সরকারি প্রকল্পের রাস্তায় বিছানো ইট উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান তুলে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদ প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গতকাল সোমবার দুপুরে সরজমিন পরিদর্শন শেষে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন বলে জানান। এসময় তারা ওই ইটগুলো ঠিকাদারের সাথে সমন্বয় করে যথাস্থানে ফেরত দেয়ার জন্যও বলেছেন।
উপজেলা এলজিইডি ও স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের পুটিয়াজানী পাকা সড়ক থেকে কাউটিয়া রাস্তার উন্নয়নে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এলজিএসপি – ৩ প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট করা হয়। পরে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন পরিষদ যৌথভাবে ওই রাস্তায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট সোলিং (ইট বিছানো) করানো হয়। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে এই রাস্তার ২৮০ ফুট আরসিসি পাকাকরণের কাজ টেন্ডার হয়। এডিপি প্রকল্পের আওতায় চলতি সপ্তাহেই এই রাস্তাটির কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আতিক এন্ড কোং কে কর্তৃপক্ষ বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।
গ্রামীণ এই রাস্তায় আগে ইট বিছানো ছিল, আর এখন করা হচ্ছে আরসিসি ঢালাই। পাকাকরন কাজ শুরুর আগে গত রবিবার স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা এই রাস্তার পুরাতন ইটগুলো তুলে তার বাড়িতে স্তুপাকারে রেখে দেন।
সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউটিয়া গ্রামের এই রাস্তার মধ্যে কিছু ইট বিছানো আছে । বাকী ইটগুলো কাজী মাহেলার বাড়ির সামনে এবং কিছু ইট বাড়ির ভেতরে স্তুপ করে রাখা রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, ইটগুলো কোন উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়েছে, তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তবে সরকারি ইট এভাবে বাড়িতে রাখা যায় কিনা তাদের জানা নেই। এ ছাড়া শেষ পর্যন্ত ইটের সঠিক হিসাবও থাকবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
এ বিষয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কাজী মাহেলা বলেন, ইট বিছানো রাস্তা পাকাকরন হচ্ছে। ঠিকাদার ইটগুলো তুলে রাস্তার পাশে রাখলে অনেকেই ইটগুলো নিয়ে যেতে পারে। তাই সংরক্ষণের জন্যই তিনি ইটগুলো সজতনে রেখেছেন। এছাড়াও বটতলার পাশের একটু রাস্তা কাঁচা রয়েছে, সেখানে এই ইটগুলো দিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, আমার ইউনিয়নের রাস্তা পাকাকরণের কাজ শুরু হবে। উপজেলা প্রকৌশলী দু একদিনের মধ্যে ঠিকাদারকে কাজ বুঝিয়ে দেবেন। এরই মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান কাউকে না বলে ইটগুলো শ্রমীক দিয়ে তুলে তার বাড়ি নিয়ে গেছেন। আমি উপজেলা প্রকৌশলী ও ইউএনও মহোদয়কে অভিযোগ দিয়েছি । তারা আজ সরজমিনে পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন।
ঠিকাদার আব্দুল আজিজ বলেন, আমাকে এখনো কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয় নি। এর আগেই ভাইস চেয়ারম্যান ইট গুলো তুলে নিয়ে গেছেন, এমন খবর শুনেছি। আমার কাজের সাথে ইটগুলো টেন্ডারে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে আমি আর কিছু জানি না।
উপজেলা প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম হৃদয় বলেন, ইট তুলে নেয়ার বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ দিয়েছেন। সরজমিন পরিদর্শনে সত্যতা পেয়েছি। এব্যাপারে ভাইস চেয়ারম্যান এবং ঠিকাদারকে বলা হয়েছে। ইটগুলো দুএকদিনের মধ্যে যথাস্থানে ফেরত দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু না জানিয়ে সরকারী রাস্তার ইট তুলে নেয়া ভাইস চেয়ারম্যানের সঠিক কাজ হয়নি। অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে অবহিত করা হয়েছে।