২০১৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের বিশেষ বরাদ্দে ডিজিটাল আলট্রাস্নোগ্রাম
ও ইসিজি মেশিন বরাদ্দ পায় মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও লোকবলের অভাবে পাঁচ বছরেও স্থাপন করা
হয়নি। ফলে অব্যবহৃত থেকেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দামী এসব যন্ত্রপাতি।
২০১৯ সালে অপারেশনের জন্য হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ৪ টি রুম বেশ ঘটা করে
উদ্বোধন করা হয়। অ্যানেসথেসিয়ার যন্ত্র, অপারেশন টেবিল, অক্সিজেন
সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির ঘাটতির কারনে চার বছরেও অপারেশন
থিয়েটারের কার্যক্রম চালু হয়নি। ২৫ চিকিৎসক পদের বিপরীতে এখানে কর্মরত
আছেন মাত্র ৮ চিকিৎসক। ফলে চিকিৎসা সেবা ও রোগ নির্নয় পদ্ধতিতে চরম
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উপজেলার ১ লাখ ৪৬ হাজার মানুষের।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬২ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ঘিওর
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায়
উন্নীতকরণ হয়। ৫০ শয্যার জনকাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসকদের ২৫টি পদের
বিপরীতে এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮ চিকিৎসক। এর মধ্যে জুনিয়র
কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র
কনসালট্যান্ট (নাক, কান, গলা), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু)
গুরুত্বপূর্ণ পদ শূণ্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। এছাড়াও অ্যানেসথেসিয়াসহ
সহকারী সার্জনের ৯টি পদও খালি রয়েছে। ২০১৯ সালে ২য় তলায় অপারেশনের
জন্য ৪টি রুম উদ্বোধন করা হলেও অদ্যাবধি তা দেখেনি আলোর মুখ। অপারেশন
থিয়েটার থাকলেও অ্যানেসথেসিয়ার যন্ত্র, অপারেশন টেবিল, অক্সিজেন
সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই।

সূত্রে জানান যায়, প্রায় ১১ বছরের পুরোনো অ্যানালগ এক্সরে যন্ত্রটি দিয়ে
রোগীদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে। প্যাথলজি বিভাগে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান
নেই ৩ বছর যাবত। প্রসূতি মায়েদের সিজার করার কোন ব্যবস্থা নেই। রক্তের দু
তিনটি পরীক্ষা ছাড়া বেশির ভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষা ঢাকা ও মানিকঞ্জ থেকে
করতে হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় শিশু রোগীদের । নবজাতক শিশু ও ডাইরিয়া
আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোন ওয়ার্ড নেই।

সেরজমিন খোঁজ নিয়ে জানান গেছে, একটি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও মুমুর্ষ
রোগীদের ঢাকা পাঠাতে হলে অধিকাংশ সময় ড্রাইভার না পাওয়ার অভিযোগ অনেক।
হাসপাতালে দালালদের উৎপাতে রোগীরা কোনঠাসা। রোগীদের বিভিন্ন প্রলোভন
দেখিয়ে এক্সরে প্যাথলজিতে সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে দালালচক্র। অফিস চলাকালীন
সময়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে রোগীর চেয়ে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানীর
প্রতিনিধিদের আনাগোনা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

অভিযোগ রয়েছে অধিকাংশ চিকিৎসকরা সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে নিজেদের
ইচ্ছামত অফিসে আসা যাওয়া করেন। কয়েকজন চিকিৎসক ঢাকা, সাভার ও জেলা সদরে
বসবাস করেন। কয়েকজন চিকিৎসক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমানে প্যাথলজিতে বসে
প্রাইভেট রোগী দেখেন।

মাইলাঘী গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, সম্প্রতি মোটর সাইকেল দূর্ঘটনার কবলে
আহতাবস্থা এই হাসপাতালে ভর্তি হই। প্রয়োজনীয় এক্সরে ও কয়েকটি পরীক্ষা এই
হাসপাতেলে করা যায়নি। পরে বাধ্য হয়ে মানিকগঞ্জ থেকে পরীক্ষা করে এনেছি।

ঘিওর বাজারের সুদেব কুমার জানান, আমার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী হঠাৎ অসুস্থ
হয়ে পরলে এই হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে আসি। কিন্তু এখানে গাইনী
ডাক্তার ও অপারেশন থিয়েটার নেই বলে জেলা হাসপাতালে স্থানান্তর করান।
স্থানান্তর করা হলেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের চালক নেই বলে জানানো হলে
বাধ্য হয়ে তিনগুণ বেশী টাকায় সিএনজি ভাড়া করে নিয়ে যাই।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: হাসিব আহ্সান জানান,
চিকিৎসকসহ জনবল সংকট এবং পরীক্ষা নিরীক্ষার যন্ত্রপাতির অভাবে
চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কেন্দ্র থেকে
বিশেষ বরাদ্দে আলট্রাস্নোগ্রাম ও ইসিজি মেশিন আমরা পেয়েছি কিন্তু
প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ও টেকনিশয়ানের অভাবে আমরা তা ব্যবহার করতে পারছি
না। তবে সীমিত জনবল দিয়ে সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন,
হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন না, এমন অভিযোগ
পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে চিকিৎসকসহ
অনান্য জনবলের চাহিদার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অনুরোধ
করা হয়েছে।