চট্টগ্রামে খুন হওয়া চাঞ্চল্যকর রেলওয়ে কর্মচারী শফিউদ্দিন হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৯ বছর পর কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।  

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ।

ফাঁসি কার্যকর হওয়া শিপন হাওলাদার চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের মৃত ইউনুছ হাওলাদারের ছেলে।

তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার নন্দনসার গ্রামে। আরেকজন নাইমুল ইসলাম ইমন চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার ডেবারপাড় এলাকার ঈদুন মিয়া সরকারের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর পূর্ব পাড়া এলাকায়।

সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। কুমিল্লা কারাগারের জল্লাদ সিরাজ উদ্দীন নাসির তাদের ফাঁসির কার্যকর করেন। ফাঁসির রায় কার্যকর করার আগে রাত ১১টা ১৫ মিনিটে কারাগারে আসেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, ১১টা ২৫ মিনিটে কারাগারে আসেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন।

তিনি জানান, রায় কার্যকর হওয়ার পরও আইনি কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেগুলো শেষ হলে রাতেই তাদের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হবে। স্বজনরা লাশ নিয়ে চট্টগ্রামে যাবেন বলে জেনেছি।

নিহত শফিউদ্দিন বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় বাসায় ঢুকে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

মামলার অভিযোগপত্র ও কুমিল্লা কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী ছিলেন শফিউদ্দিন। এছাড়াও তিনি ছিলেন স্থানীয় রেলওয়ে আমবাগান এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষা কমিটির আহবায়ক।  
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। শফিউদ্দিন এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মদ, জুয়া ও রেলওয়ের অবৈধ সম্পদ দখলের প্রতিবাদে সোচ্চার থাকার কারণে রেলওয়ের জায়গা থেকে চার দফায় অবৈধ বস্তি ও কলোনি উচ্ছেদ করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। এসব ঘটনার জের ধরে একদল লোক তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।  

২০০৩ সালের ১৪ জুন সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তার সরকারি বাসায় ঢুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে শফিউদ্দিনকে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম বাদী হয়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা করেন। ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে এ হত্যা মামলায় শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেন।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আসাদুর রহমান বলেন, ২০০৪ সাল থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি কারাগারে ছিলেন। গত প্রায় তিন বছর আগে তাদেরকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

তিনি বলেন, সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছিল। কিন্তু দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত রিভিউ খারিজ করে দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষার আবেদন করা হলে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে কারাবিধি অনুসারে ফাঁসির রায় কার্যকর করতে হয়। এছাড়া কারাবিধি অনুসারে অন্যান্য আরো কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।