বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকল কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ‘নিঃশব্দ ডিজিটাল কারচুপি’র মহাযড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে ইসি ও সরকার। আর এটা করা হলে সেটা হবে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার কফিনে সর্বশেষ ‘পেরেক’ ঠোকার শামিল।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার’ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে মির্জা ফখরুল এদেশের মানুষের ভোটাধিকার রক্ষার দায়িত্ববোধ থেকে নির্বাচন কমিশনের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও বাতিলের দাবি জানান।
তিনি বলেন, আশা করছি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন জনগণের অধিকারহানিকর ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।
ফখরুল বলেন, এ রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপ, শলা-পরামর্শ বা নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করা। কিন্তু তার কিছুই করেনি ইসি।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় ইভিএম সমগ্র বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রোগ্রামিংয়ে ভ্রান্তি, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং টেম্পারিং বা কারসাজি, কম্পিউটারভিত্তিক ভোট প্রদান যন্ত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও সম্ভাবনা এবং নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তদের বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনি ফলাফল পাইয়ে দেয়ার সুযোগসহ নানা নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং স্টেকহোল্ডারদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সবকটি আসনে ইভিএম ব্যবহারের একতরফা সিদ্ধান্ত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘নিঃশব্দ ডিজিটাল কারচুপি’র এক মহাষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন মির্জা ফখরুল।
তার দাবি, ইভিএম ভোটার-বান্ধব কোনও পদ্ধতি নয়। বরং কাগুজের ব্যালটই ভোটারবান্ধব। যেখানে ভোটার তাদের পছন্দমতো প্রতীকে সিল মেরে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন। কিন্তু ইভিএমে ভোটার অডিট ট্রেইল না থাকায় তিনি বুঝতেই পারবেন না তিনি যাকে ভোট দিতে চেয়েছেন ভোটটি তিনিই পেলেন কিনা। ফখরুলের ভাষায় এটি হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
মহাসচিব বলেন, ‘ডিজিটাল’ নামে এমন কোনও ত্রুটিপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যবহার বিএনপি কখনই বরদাশত করবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম’ প্রকল্পে সেনাসদস্য নিয়োগের প্রচার চালিয়ে নির্বাচন কমিশন গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাই মির্জা ফখরুলের আহ্বান সেনাবাহিনীকে যেন যে কোনও ধরনের বিতর্কিত কাজের বাইরে রাখা হয়।
ইভিএম প্রকল্প গ্রহণে ইসি, সরকার ও তার ব্যবসায়ী বান্ধবদের বিরামহীন আগ্রহের পেছনে নিঃশব্দ ভোট ডাকাতির সাথে সাথে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও রয়েছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।