মোঃ সাইফুল ইসলাম, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি, ২৫ আগস্ট ।
মানিকগঞ্জের ঘিওরে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক কলেজ ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত বখাটে মোঃ শরিফ মিয়া (৪০) দুই সন্তানের জনক। আগুনে কাজল আক্তার নামের ওই কলেজ ছাত্রীর শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। গুরুতর আহত ওই ছাত্রী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের দ্বিমূখা গ্রামে। অভিযুক্ত বখাটে মোঃ শরিফ মিয়ার বাড়ি একই এলাকায়। সে দুই সন্তানের জনক।

কাজল আক্তারের ফুফাতো ভাই ফজলুল হক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিরান খাঁন বলেন, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের দ্বিমুখা গ্রামের মৃত কাজী ময়নালের মেয়ে কাজল আক্তার (২৫) মানিকগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের বিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। ঐ গ্রামের বখাটে শরিফ মিয়ার (৪০) মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর সময় এক পর্যায়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কৌশলে ছাত্রীকে প্রেমের ফাদেঁ ফেলে। দীর্ঘ দিন প্রেমের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় তাদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। দুই সন্তানের জনক মোঃ শরিফ মিয়ার সাথে বিয়ের আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

কাজলের মা বলেন, গত এক বছর পূর্বে পারিবারিকভাবে মেয়েটিকে মোবাইল ফোনে শিবালয় উপজেলার ফেচুয়াধারা গ্রামের সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী সোহেল রানার সাথে বিয়ে হয়।  মেয়েটির বিয়ের পর থেকে ছেলেটির অনৈতিক কাজ প্রত্যাখ্যান করলে শরিফ তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতে থাকে। স্বামী প্রবাসে থাকার দরুন কাজল তার বাবার বাড়ি থেকে পড়াশোনা চালিয়ে আসছিলেন। সোমবার রাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে থাকায় কৌশলে ডেকে নিয়ে যায় বাড়ির পাশে কাঠ বাগানে। কথা কাটাকাটির পর বখাটে শরিফ কলেজ ছাত্রীর শরীরে হাতে থাকা বোতলে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর শরিরে ধাও ধাও করে আগুন জ্বলে উঠে।  ডাক চিৎকার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে শরিফ পালিয়ে যায়। মেয়েটি কাঠ বাগানের পাশেই পানি থাকায় শরিরে আগুন নিয়ে পানিতে ঝাঁপ দেয়। আশে পাশের লোকজন তার চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে এসে মুমুর্ষ অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে।

মেয়েটিকে গুরুতর অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাঁকে রাজধানী ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রেফার্ড করেন। তার অবস্থা সংকটজনক বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।

ঘটনা শোনার পর বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভূগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ হাফিজুর রহমান ও ঘিওর থানার ওসি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব।

এ ঘটনায়  মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭ টায় কাজল আক্তারের মা রেনু বেগম ঘিওর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ঘিওর থানার ওসি মোঃ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেছি। মেয়ের মা থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঢাকার হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আসামী গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।