মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাসান মিরুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। বুধবার (৩ মার্চ) সিঙ্গাইর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মো. দুলালকে প্রধান আসামি করে তার পাঁচ ভাইসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনের নামে থানায় মামলা করেন নিহত মিরুর ভাই রিয়াজুল করিম হিরু।
মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি সিএনজি ও ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- প্রধান আসামির মোল্লা মো. দুলালের ছোট ভাই ইমরান মোল্লা, সোহান মোল্লা ও সিএনজি চালক ইমান আলী। বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, প্রধান আসামি সিঙ্গাইর ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মো. দুলালের ভাই উপজেলা পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন আঙ্গুর, আলাল উদ্দিন, হিমেল, হৃদয় ও আমীনুর রহমানসহ আরো দুজন। তাদের সবার বাড়ি পৌরসভার আজিমপুর গ্রামে।
রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের ধারণা, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও পূর্ব শত্রুতার জেরে খুন হন ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন মিরু।
এদিকে ঘটনাস্থলের পাশে একটি দোকানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেই ফুটেজ পর্যালোচনা করে ছাত্রলীগ নেতা মিরুর খুনিদের শনাক্ত করা হয়। সেখানে দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন মিরু এবং তার বন্ধু আলমাস খান উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় দুটি মোটরসাইকেল পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর মিরুর বন্ধু আলমাস খান দৌড়ে পালাচ্ছেন। পেছন থেকে ধারাল অস্ত্র হাতে দুই যুবক ধাওয়া করছে তাকে। এর কিছুক্ষণ পর যে সিএনজি দিয়ে তাদের মোটরসাইকেল গতিরোধ করা হয় সেই সিএনজি দুটিও তাদের পেছনে যায়।
নিহত মিরুর বন্ধু আলমাস খান জানান, দুটি সিএনজি অটোরিকশা দিয়ে প্রথমে তাদের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করা হয়। এরপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে তাদের ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। দুজন দুদিকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন তারা। মিরুর পেছনে ধাওয়া করে ৭-৮ জন। হামলাকারী সবাই মুখোশপরা ছিল। দৌড়ে একটি ভুট্টাখেতে আশ্রয় নিয়ে প্রাণে বাঁচেন তিনি।
সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রকিবুজ্জামান জানান, ফারুক হাসান মিরুকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মোল্লা মো. দুলালকে প্রধান আসামি করে তার পাঁচ ভাইসহ ১২ জনোর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরো ৪-৫ জনের নামে থানায় মামলা হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রথমে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি সিএনজির একটির চালক ইমান আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী ইমরান মোল্লা ও সোহান মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি সিএনজি ও ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১ মার্চ সোমবার মধ্যরাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের বাড়ির একটি গানের অনুষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হাসান মিরু ও তার বন্ধু আলমাস খান পৃথক দুটি মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। সিঙ্গাইর উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে দুটি সিএনজি দিয়ে তাদের গতিরোধ করা হয়।
পরে মিরুকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যান ঘাতকরা। মিরুকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (২ মার্চ) দুপুরে মারা যান তিনি।
সূত্র- কালের কন্ঠ।