জনমত ডেস্ক, ২৬ এপ্রিল। করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে সীমিত আকারে আজ রবিবার থেকে খুলছে গার্মেন্ট কারখানা। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে কী ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে- তা নিয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ একটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। ওই গাইডলাইন অনুযায়ী, দূরবর্তী এলাকা কিংবা ঢাকার বাইরে চলে যাওয়া শ্রমিকদের বাদ দিয়ে আপাতত কারখানার কাছাকাছি থাকা শ্রমিকদের দিয়ে উৎপাদন কাজ চালানো হবে। 

গতকাল শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে একটি সভার আয়োজন করে। ওই সভায় আজ থেকে কারখানা খোলার এ সিদ্ধান্ত হয়।

শুরুতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের নিটওয়্যার খাতের কিছু কারখানা খুলবে। এরপর ধাপে ধাপে সাভার, গাজীপুরসহ অন্যান্য এলাকার কারখানা খুলবে। 

এদিকে শ্রম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক কারখানা খোলার বিষয়টি অবহিত করে শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশ ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করেছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সদস্যভুক্ত কারখানাগুলো পর্যায়ক্রমে খোলা হচ্ছে। শুরুতে আজ ও আগামীকাল ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কিছু কারখানা, ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিল আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই ও মানিকগঞ্জের কারখানা, ৩০ এপ্রিল রূপগঞ্জ, নরসিংদী, কাঁচপুর এলাকা, ২ ও ৩ মে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ এলাকার কারখানা চালু করা হবে। কারখানা খোলার ক্ষেত্রে শুরুতে উৎপাদন ক্ষমতার ৩০ শতাংশ চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। 

এদিকে মালিকপক্ষ কারখানা চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও শ্রমিক সংগঠনগুলো বর্তমান করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী পরিস্থিতিতে কারখানা চালু না করার পক্ষে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সাবেক মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ইতিমধ্যে দুই শতাধিক শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কারখানা খুললে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে। কোনোক্রমেই কারখানা খোলা উচিত হবে না। 

গতকালের সভায় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়াও অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে অনেকে সশরীরে উপস্থিত না হয়ে অনলাইনে ভিডিওতে যুক্ত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন। 

ওই সভায় অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ঢালাও সব এলাকার কারখানা না খুলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের হার বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকার কারখানা খোলার পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায় খোলার পরামর্শ দেন। এজন্য গ্রীন, ইয়েলো ও রেড জোন হিসেবে ভাগ করার কথা বলেন। 

তিনি বলেন, এপ্রিলে রপ্তানি আদেশ কমে গেছে ৮৪ শতাংশ। সুতরাং যত কম শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করা যায়, সে চেষ্টা করা দরকার। করোনাভাইরাসের বর্তমান পরিস্থিতিতে সব এলাকার কারখানা খোলার ক্ষেত্রে ঝুঁকি দেখছেন তিনি। 

শিল্পাঞ্চল পুলিশের সূত্রে জানা যায়, এখন পর্যন্ত গার্মেন্টসহ বিভিন্ন খাতের দুই থেকে আড়াইশ শ্রমিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অবশ্য বিজিএমইএ’র পরিচালক আরশাদ জামাল দীপু মনে করেন, গার্মেন্টে করোনা আক্রান্ত শ্রমিকের সংখ্যা এত হবে না। এত বেশিসংখ্যক শ্রমিক আক্রান্ত হলে নিশ্চয়ই এসব খবর চাপা থাকত না। 

এর আগে সরকার গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে সাধারন ছুটি ঘোষণার পর পোশাক শিল্পও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে পরবর্তী খোলার তারিখে শ্রমিকদের কারখানায় আসার নোটিশ দেওয়ার পর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকদের ঢাকামুখী স্রোত শুরু হয়। সমালোচনার মুখে পরবর্তীতে কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিজিএমইএ। তবে এর মধ্যেই কারখানা চালু করার উপায় খুঁজতে থাকে কারখানা মালিকরা।