প্রকৌশলী এ,এন,এম এনায়েত উল্লাহ, ৩১ মার্চ।

রোজকার মত আজও ফজরের পর বারান্দার রেলিংএ ঠেস দিয়ে বাহিরটা দেখছিলাম৷ কেমন শান্ত পরিবেশ; আকাশ মেঘমুক্ত সুনীল, গাছের পাতাগুলি গাঢ় সবুজ৷ ভোরের এ স্নিগ্ধ শান্ত পরিবেশ আমাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে৷ শুধু এমন একটা পরিবেশের জন্য পৃথিবীতে হাজার বছর বাঁচার সাধ জাগে৷ তবে অন্যান্য দিনের সকাল থেকে আজকের সকালটা কেমন যেন থমথমে ছমছমে পরিস্থিতির৷ এই সময়টাতে কয়েকদিন আগেও দেখা যেত মসজিদ থেকে নামাজ পরে মুসল্লিরা বাসায় ফিরেছেন৷ কেউ প্রাতঃভ্রমণে হাতপা ছুড়ে দিয়ে শরীরের আড়মোড়া ভাঙছেন৷ আশেপাশের গাছগুলি থেকে কাক, চড়ুইপাখী, দোয়েল ইত্যাদি পাখির ডাক শোনা যেত, কী মধুর আবহ তৈরি হতো, রোদের তীব্রতা প্রখর না হওয়া পর্যন্ত বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হতোনা৷ কিন্তু আজকের আকাশ যেন  আরো পরিষ্কার-নিষ্কলুষ নীলে ছেয়ে আছে কোথাও এতটুকু মেঘের মায়াবী অস্তিত্বও নেই৷ গাছের সবুজ অন্ধকার গাঢ়৷ পাখির কূজন তীব্র; অন্তরের গহীনে নাড়া দেয়৷ কুকুরের ঘেউঘেউ যেন কোন অশনি বার্তাবহ গা ছমছমে৷ নভেল করোনা ভাইরাসের দ্বারা সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে আজকের এই অবস্থা৷ সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসে ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে নিজেকে এবং  দেশের মানুষকে করোনার ভয়ঙ্কর থাবা থেকে রক্ষার জন্য সরকারের ঘোষিত সঙ্গনিরোধ ছুটিতে অন্যদের মত আমিও ঘরে অবস্থান করছি৷ করোনা থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে গৃহবন্দি করা, পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন থাকা আর এ সারা জাহানের মালিকের কাছে এ আযাব থেকে মুক্তির প্রার্থনা ছাড়া আপাততঃ কোন প্রতিষেধক বা চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই৷পত্র পত্রিকা, টেলিভিশন সংবাদ আর অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে কোন আশার আলো দেখছি না উপরন্তু মনে হচ্ছে সারা বিশ্ব এক ভয়ংকর দুর্যোগের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে৷ ধণী-শিক্ষিত দেশগুলি  রোগের ভয়াবহতা সামাল দিতে বেসামাল অবস্থা এবং প্রতিদিনের মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখে আমাদের দেশের কী অবস্থা হতে পারে ভেবে পেরেশান হয়ে যাই৷ আল্লাহই ভালো জানেন৷ সারা বিশ্বের সর্বশেষ পরিসংখ্যান দেখে মনে হচ্ছে পৃথিবী একটা মৃত্যুপুরীতে পরিনত হতে যাচ্ছে; মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে গোটা বিশ্ব এখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এ ভাইরাস এখন আর ১৯৯ দেশ ও অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই, গ্রাস করেছে সমগ্র বিশ্বকে। এত দিন যেসব দেশ করোনামুক্ত ছিল, এখন সেসব দেশও আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রদেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে এ ভাইরাস।সেখানে প্রতি ৯ মিনিটে একজন করে মারা যাচ্ছেন। এ অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা হাজারের কাছাকাছি এবং আক্রান্ত ছিল প্রায় ৬০ হাজার। এমনকি সেখানে বসবাস করা বাংলাদেশিদের মধ্যে এক দিনেই মারা গেছেন আটজন।আগেও মারা যান ১৩ বাংলাদেশি। গতকাল সন্ধ্যায় পাওয়া ওয়ার্ল্ডোমিটার, আলজাজিরা ও সিএনএনের খবর অনুযায়ী বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সোয়া ৭ লাখে, মোট মৃতের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ১২ ঘণ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০০, স্পেনে ৫ সহস্রাধিক, জার্মানিতে দেড় হাজার, ইরানে সাড়ে ৩ হাজার এবং বেলজিয়ামে সহস্রাধিক। এ ছাড়া এ সময় পর্যন্ত ইরানে মারা যান ১১৭ জন, স্পেনে ৮১২ জন।
এর আগে গতকাল সকাল পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৬। মোট মৃতের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৮৯। এ ছাড়া নিউইয়র্কে প্রতি ৯ মিনিটে একজন মারা যাচ্ছিলেন। এ প্রদেশে এ সময় পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬৫-এ। এ ছাড়া ইতালিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ১০ হাজার ৭৭৯
২৪ ঘণ্টায় মারা যান ৮৮৯ জন। মৃতের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্পেনেও ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয় ৮২১ জনের। ইরানেও আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৪০-এ পৌঁছে যায়। ব্রিটেনেও মোট মৃত্যুতে ১ হাজার ২২৮ জনের রেকর্ড তৈরি করে। জার্মানিতে মারা যান ৫৪১ জন। এ সময় পর্যন্ত বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৩০২ এবং মোট মৃত ৩৬ হাজার ৪৩৪। এ অবস্থায় যখন রাষ্ট্রপ্রধানগন বলেন; তাদের করণীয় সব শেষ এখন আকাশ থেকে সাহায্য সহায়তা না এলে এ মহামারী মোকাবেলা করা যাবে না৷ অ্যামেরিকার মত দেশ যখন বলে মৃতের সংখ্যা দুই লক্ষের মধ্যে সীমিত রাখতে পারলে এটা হবে বড় অর্জন৷ এ সব শুনে স্থির থাকা সত্যি মুশকিল৷ মানুষের চেষ্টা করে যেতে হবে, পরিনতি কী হবে সেটা আল্লাহই ভালো জানেন৷ যদি বিল গেটসের মত আশাবাদী মানুষ হই তাহলে এটাকে উপরওয়ালার সংশোধনমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ধরে নিতে পারি৷ তাহলে বলা যায় নিশ্চয়ই এই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার জন্য আল্লাহ তার সৃষ্টিকে সুশৃঙ্খল করার উদ্যোগ নিয়েছেন৷ মানুষ নির্বিচারে সম্পদ আহরণ করে যে অরাজক বৈষম্যমূলক পৃথিবী তৈরি করেছে তা অসহনীয় পর্যায়ে যাওয়ায় সংশোধন অপরিহার্য হয়ে পরেছে বলে মনে হয়, তাই বুঝি এ ব্যবস্থা! তাহলে চলুন দেখি করোনা ভাইরাস পৃথিবীর জন্য কী কী ভালো দিক বয়ে আনল বিশেষজ্ঞরা কি বলে৷
কভিড-১৯ দ্বারা বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে , ফ্লাইট বাতিল করা হচ্ছে, এবং এখন অনেক লোক বাড়িতে বসেই কাজ করছেন বা সঙ্গনিরোধ প্রক্রিয়ায়র কারণে ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছেন। জীবন, যেমনটি আমরা জানি, ব্যপক পরিবর্তিত হয়েছে। তবে কভিড-১৯ পরিবেশের উপর কিছু আকর্ষণীয় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এখানে কিছু দুর্দান্ত উদাহরণ দেওয়া হল। বিভিন্ন  উপায়ে করোনাভাইরাস পরিবেশকে প্রভাবিত করছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত৷

১. সারা পৃথিবীতে বিশেষ করে চীনে উল্লেখযোগ্য হারে বায়ুদূষণ হ্রাস;
চীনসহ সারা পৃথিবীতে বায়ু দূষণের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে৷ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে অন্যতম প্রধান প্রভাব বিশ্বের বহু অংশে বায়ু দূষণের উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে। সর্বাধিক উল্লেখযোগ্যভাবে চীন এবং ইউরোপের মতো শিল্পোন্নত, বা উন্নয়নশীল ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই হ্রাসের কারণ করোনার প্রকোপের কারণে অনেকদিন থেকে অদ্যাবধি শিল্প কলকারখানাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। নাসা এবং ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) এর ভাষ্য মতে  স্যাটেলাইট চিত্রগুলি থেকে বিশ্বজুড়ে নির্গমনের এত হ্রাস এর আগে কখনো দেখা যায়নি৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইএসএর সেন্টিনেল -৫ পি উপগ্রহের মতো উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ডেটা নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO2) এর মতো দূষণকারী গ্যাসগুলিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে । নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড প্রধানত গাড়ির ইঞ্জিন, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য শিল্প প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্টি হয়৷এটি বিশ্বাস করা হয় যে স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি বিশেষত হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার প্রধান কারণ। দূষক গ্যাসের সব থেকে বেশি হ্রাস দেখা গেছে মধ্য চীনের উহান শহরে। যেখান থেকে নভেল করোনা ভাইরাসের উৎপত্ত হয় বা ইপি সেন্টার ৷ জানুয়ারী থেকে শহরটি কঠোরভাবে লকডাউনে আছে। এ শহরের প্রায় ১১ মিলিয়ন বাসিন্দার বেশিরভাগই তাদের বাড়ি এবং শিল্প এলাকার মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে, এবং কার্যকরভাবে ভ্রমণ বন্ধ ছিল। এর ফলে এ সময় ১০%-৩০% নির্গমন হ্রাস পায় এবং এ লকডাউন চলতে থাকলে দূষণ সহনীয় মাত্রা পাবে৷
২. ইতালির ভেনিস শহরের পানি আবার আগের মত পরিষ্কার;
পরিবেশের উপর আরেকটি অভাবনীয় প্রভাব দেখা গেছে ইতালির ভেনিসে। করোনা ভাইরাসজনিত কারণেপর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেনিসের খালগুলির পানি স্মরণকালের যে কোন সময়ের থেকে পরিষ্কার ৷ মোটরবোটগুলি কার্যকরভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ সাথে পলির মন্থন এবং অন্যান্য পনি দূষণকারী পদার্থ  নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ভেনিসের বেশিরভাগ অঞ্চলে, পানি  কতটা পরিষ্কার হয়ে গেছে তা দেখে বাসিন্দারা অবাক হয়ে গেছেন। বাস্তবে, খালগুলিতে আবারও মাছ দেখা যাচ্ছে।
 ৩. নিউইয়র্কের আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে৷
বিশ্বজুড়ে বহু লোক স্বেচ্ছায় বা সরকারী আদেশে স্ব-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চীনের বাইরের কিছু বড় শহরগুলিতে বায়ু মান উন্নত হতে দেখা গেছে  তার মধ্যে নিউইয়র্ক অন্যতম৷ গবেষকরা দেখেছেন যে নিউ ইয়র্কে কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো বায়ু দূষণকারীদের মধ্যে ৫% থেকে ১০% হ্রাস পেয়েছে। মিথেন নির্গমনও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। কার্বন মনোক্সাইড নির্গমনও ৫০% কমেছে কোন কোন এলাকায় ৷ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে কলম্বিয়ার অধ্যাপক রিসেইন কমনে বলেছেন, গত দেড় বছর ধরে নিউইয়র্কের ব্যতিক্রমীভাবে উচ্চ পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড রয়েছে। তিনি এখনই  সবচেয়ে পরিষ্কার আকাশ দেখছেন। সাধারণত মার্চে যে পরিমান দূষণ দেখা যায় বর্তমানে তার অর্ধেকেরও কম৷ 
বিমান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বায়ু দূষণ হ্রাস পাচ্ছে পরিবেশের উপর আরেকটি আকর্ষণীয় প্রভাব হ’ল বিমান ভ্রমণে উল্লেখযোগ্য হ্রাস। ইউরোপের মতোজায়গাগুলিতে, বিমান চলাচল গুরুতরভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটি বাতাসের গুণগতমানের উন্নতি করছে এবং বিশ্বের অনেক দেশের উপরে আকাশে দূষণ হ্রাস করছে।
৪. চীনে কয়লা দাহ থেকে নির্গমন  হ্রাস পাচ্ছে; 
করোনাভাইরাসের ফলস্বরূপ পরিবেশের উপরে আরও একটি প্রভাব হ’ল কয়লা ব্যবহার হ্রাস। এটি চীনের মতো জায়গাগুলিতে বায়ু দূষণকারীদের হ্রাস করতে যথেষ্ট  অবদান রেখেছে। অঞ্চলগুলিতে কেবল বায়ুর গুণগত মান উন্নত হচ্ছে তা নয়, এটি কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইডের মতো বায়ুবাহিত দূষকের পরিমাণ হ্রাস করছে৷  চীন বর্তমানে কয়লার অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী এবং গ্রাহক। অনুমান করা হয় যে তারা ২০১৮ সালে তাদের জ্বালানীর প্রয়োজনের জন্য এর প্রায় ৫৯% ব্যবহার করেছে৷ কয়লা চীনের বেশিরভাগ শিল্প পরিচালিত করতে সহায়তা করে এবং এর অনেক নাগরিকের জন্য ঘরোয়া জ্বালানী উৎস হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে চীনের প্রধান কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে কয়লার ব্যবহারে ৩৬% হ্রাস পেয়েছে।
৫. জলজ প্রাণীর আবাসস্থলগুলি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর 
পত্রিকার খবর থেকে দেখা গেছে বঙ্গোপসাগরে পিংক কালারের ডলফিনের আবির্ভাব হয়েছে যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি৷ সৈকতে কচ্ছপ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর নির্বিঘ্ন বিচরণ সম্ভব হয়েছে৷ পৃথিবীতে মানুষ এবং অন্যন্য প্রাণীর ভারসাম্য বজায় না রাখলে পৃথিবী মানুষের বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়৷ মানব জাতির স্বার্থেই প্রকৃতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে৷ আমরা বিলাসী জীবন যাপনের উপকরণ সংগ্রহে নির্বিচারে পরিবেশের ধ্বংস সাধন করি৷ করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল পরিবেশের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে না পারলে এ ধরণের এমনকি তার চেয়েও ভয়ঙ্কর মহামারী দ্বারা মানব জাতিকে ভয়াবহ পরিণতি মোকাবেলা করতে হবে৷ প্রকৃতিকে  যা দেয়া হয় ফিরিয়ে দেয় তার থেকে বহুগুন বেশি৷ মানব জাতির নিজ স্বার্থে পরিবেশকে তোয়াক্কা না করে চলায় মানুষের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতা সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছে ৷
৬. অভ্যন্তরীণ জ্বালানী ব্যবহার ক্রমবর্ধমান, বাণিজ্যিক ব্যবহার আরও নিচে নেমে  নিঃসরণ হ্রাস করছে;
যেহেতু আরও বেশি সংখ্যক লোক বিশ্বজুড়ে লকডাউনের আওতায় পড়েছে, তাই আবাসিক বিল্ডিংগুলিতে জ্বালানি ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক লোক এখন বাড়িতে থেকে কাজ করে৷ কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৬% থেকে ৮% অভ্যন্তরীণ জ্বালানী ব্যবহার বেড়েছে। বিপরীতে, বাণিজ্যিক বা শিক্ষাগত ভবনে খুব কম লোক থাকায়, তাদের জ্বালানি খরচ ৩০% এ নেমে এসেছে । এটি চূড়ান্তভাবে জ্বালানি সাশ্রয় করবে ৷ চাহিদা কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রে দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহার কমাতেও এর প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশেও অনুরূপভাবে জ্বালানি সাশ্রয় হবে৷
৭.  করোনা সারা পৃথিবীতে সর্বক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার বোধ তৈরি করতে সহায়তা করেছে;
বর্তমানে সারা পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে হাজার হাজার লোকের মৃতুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ এ রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসা ছাড়া কোন ঔষধ নেই, কোন প্রতিষেধক নেই৷ একমাত্র ব্যবস্থা ঘরে থেকে কিছুক্ষণ পর পর হাত ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করা৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা৷ বাহিরে গেলে মাস্ক, হাতগ্লাভস ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষা দেয়া৷ সামগ্রিকভাবে বিশ্বজুড়ে পরিচ্ছন্ন পরবিশের চর্চা করতে করোনা ভাইরাস বাধ্য করছে৷ ফলে সারা বিশ্বে মানুষের মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার বোধ তৈরি হয়েছে৷ সর্ব ক্ষেত্রে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্নতার চর্চা হলে একটা সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সুস্থ জাতি তৈরিতে ভূমিকা রাখবে ৷
 ৮. এখন প্যারিস ক্লাইমেট চুক্তির  লক্ষ্যগুলি শীঘ্রই পূরণ করা যাবে বলে আশা করা যায়৷
  পরিশেষে, কোন কোন বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন যে মহামারীজনিত কারণে দেশগুলি তাদের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলি পূরণ করতে সক্ষম হতে পারে। পরিবহন ও উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রগুলি বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে এ ক্ষেত্রগুলির সাথে সংশ্লিষ্ট নিঃসরণ হ্রাস পাচ্ছে। এটি প্রভাবিত দেশগুলিকে তাদের ২০১৫ প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্যগুলি স্বেচ্ছায় পূরণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মতো অন্যান্য জনবহুল শহরগুলিতে বায়ু মানের উন্নতির বিষয়টিও উল্লেখযোগ্য ৷ মার্চ মাসের শেষের দিকে থেকে বায়ুবাহিত পিএম-২.৫ (পার্টিকুলেট ম্যাটার) এর স্তর ৩৬% হ্রাস পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে ট্রাম্পের মত যারা জলবায়ু রক্ষায় অর্থ ব্যয়কে তামাশা মনে করেন তাদের বোধের পরিবর্তন করে পৃথিবীকে বাসযোগ্য করার অনুপ্রেরণা পাবে৷