এ,এন,এম এনায়েত উল্লাহ 
বর্তমানে পৃথিবী ব্যাপী এক আতঙ্কের নাম করোনা ভাইরাস ৷ আমরাও আতঙ্কিত৷ প্রতিদিন আক্রান্ত দেশের সংখ্যা, মানুষের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা বাড়ছে৷ এর চেয়ে বেশী সংখ্যক মৃত্যু ঘটছে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত; সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের দেশে প্রতি মাসে পাঁচশতের বেশী লোক মারা যায়, যুদ্ধ বিগ্রহে লক্ষ লক্ষ লোক মারা যায় প্রতিনিয়ত;  কোন ভ্রূক্ষেপ করি না৷ কিন্তু মৃত্যু কম হলেও সবাই আতঙ্কিত কারণ এ ক্ষেত্রে বাদবিচার নেই; ধনী নির্ধন,  রাজা-প্রজা, শাসক -শাসিত নির্বিচারে আক্রান্তের সম্ভাবনা সকলকে আতঙ্কিত করে তুলেছে ; পৃথিবী প্রায় অচল হওয়ার পথে৷ পুরো মানব জাতি ঘরে বন্দি, ব্যবসা-বানিজ্য স্থবির৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে৷ কর্মচঞ্চল মানুষ ঘরে আটকে পরে আছে৷ প্রতি মুহুর্তে আক্রান্ত হওয়ার ভয়, মৃত্যুভয় মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ আপাততঃ কোন চিকিৎসা নেই প্রতিষেধক নেই৷ আক্রান্ত হলে সংক্রমণের ভয়ে অতি আপনজন যাদের সুখী রাখার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা ছিল বুকে ভালোবাসার জায়গা ছিল তারাও কাছে আসতে ভয় পায় মৃত্যু হলে দাফন করার লোক পাওয়া যায় না৷ আরেক স্বার্থপর পৃথিবীর চেহারার সাথে পরিচিত হচ্ছি ৷ পৃথিবীর জন্য মানুষের মায়া বড় বেশী৷  এ সুন্দর ভুবনে কেউ মরতে চাই না৷ তাইতো এ পৃথিবীকে সাজানোর জন্য কত প্রতারণা, প্রবঞ্চনা৷ কী করে অন্যের সম্পদ কেড়ে নিয়ে সম্পদের পাহাড় বানানো যায় আমৃত্যু সেই প্রচেষ্টায় অবিরাম নিরত৷ প্রকৃতিকে ধ্বংস করে সম্পদ আহরণে মৎসন্যায় সমাজে নিজের প্রতিপত্তি, প্রতাপ জাহির করতে ক্ষুধার্ত হাত উপেক্ষা করি, মানুষে মানুষে ব্যবধান তৈরি করি, অসম্মান, অশ্রদ্ধা  করি ৷ কিন্তু আমরাতো এ জগতে ক্ষণিকের বাসিন্দা; করুণা করে মালিক থাকতে দিয়েছেন৷ এ বাসগৃহে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাসিন্দা আসে, পুরনো জনের প্রস্থান হয় নিয়ম করে৷ বাসিন্দাগন প্রতিনিয়ত তছরুপ করছেন৷ বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গেলে ভবিষ্যত বাসিন্দাদের জন্য বাসযোগ্য করার জন্য হস্তক্ষেপ করেন ৷ তাইতো এ ধরনের বিপর্যয় মাঝে মধ্যে পৃথিবীতে আসে৷ লক্ষণীয় বিষয় হলো বিপদ দিলে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা দিয়ে দেন৷ অসুখ দিলে আবার প্রতিষেধকও দিয়ে দেন কারণ একেবারে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায় আপাততঃ নেই৷ এখনতো আক্রান্ত ব্যাক্তি থেকে দূরে থাকলে কোয়ারেন্টাইনে থাকলে, আইসোলেশনে থাকলে পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন থাকলে এর থেকে বাঁচার ব্যবস্থা রেখেছেন৷ ভেবে দেখেছেন কি যদি বায়ু বাহিত ভাইরাস হতো তাহলে কী হতো৷ চাইলে তাঁর জন্য খুব কঠিন বিষয় কি? বিপদ আসলে আবার তার সাথে সাথে মানব কল্যানকর বিষয়ও থাকে৷ এ যেন করোনা ভাইরাসের বদান্যতা  যেমন;

১. করোনার ভয়ে এখন সবাই গৃহে অবস্থান করছেন যারা এতদিন ছুটিছাটা নিয়ে পেরেশানিতে ছিলেন কর্মক্লান্ত ছিলেন তাদের জন্য এক দারুণ মওকা ইচ্ছে মত ছুটি কাটিয়ে পরিবারের সাথে সময় দেয়ার অবাধ সুযোগ এই প্রথম৷ ধন্যবাদ করোনাকে৷
২. নিজে নিজে ছুটি ঘোষণা করে অফিসে না যেয়ে  কোয়ারেন্টাইনের উছিলায় বাসায় থেকে যাওয়ার স্বাধীন পরিবেশ তৈরি, সারা জীবনে এমন সুযোগ  এই একবারই এলো; করোনাতো ধন্যবাদ পেতেই পারে৷
৩. ছাত্র-ছাত্রী হলে অভিভাবকের  পীড়াপীড়ি  শিক্ষকের চোখ রাঙানি দেখতে হবে না অনির্দিষ্ট কালের জন্য৷ কী আনন্দ লেখাপড়া নেই, পরীক্ষা নেই, কোচিং নেই, গেইম খেলার অফুরান সুযোগ; আহাঃ কী আনন্দ আকাশে বাতাসে৷ বাবা-মাও আনন্দে আছে লেখাপড়ার অনেক খরচ কমে যাওয়ার খুশীতে৷ জয়তু করোনা৷
৪.রাস্তায় যানবাহন নেই শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ নেই নিস্তরঙ্গ পরিবেশ কোলাহল নেই৷ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল নেই মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে প্রতিদিন শত শত মৃত্যু রুখে দিয়ে প্রিয়জন থেকে আপনজন কেড়ে নেয়ার মচ্ছব বন্ধ করার জন্য করোনা ধন্যবাদার্হ৷ জ্বালানি আমদানী খরচ বিলিয়ন ডলার বেঁচে যাওয়া, চিকিৎসা খরচ, উপকরণ আমদানী খরচ বেঁচে যাওয়া দারুণ খবর!
৫. রাস্তাঘাট -আকাশ-বাতাস পরিষ্কার থাকার কারণে পরিচ্ছিন্ন নির্মল হাওয়ায় বুকভরে নিশ্বাসের তৃপ্তি আনন্দদায়ক৷ ডেঙ্গু সহ পরিবেশের কারণে অন্যান্য রোগের প্রকোপ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরিতে করোনার জুড়ি নেই৷
৬. বেপরোয়া অবাধ্য মানুষ ঘরে-বাইরে আচার-আচরণে নিয়মের অনুবর্তী হতে বাধ্য হয়েছে৷ বাদশাহী ফরমান ছাড়াই সতর্ক অবস্থানে৷ রাজা প্রজা সকলেই একজনের হুকুমের তাবেদারি করছে৷ সকলের জন্য ধর্ম-বর্ণ, ধণী-গরীব, রাজা-প্রজা শিক্ষিত-অশিক্ষিত শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এক আইন এক নির্দেশনা প্রয়োগ করে সমতা বিরাজমান৷ কী দারুণ ক্ষমতা ক্ষুদ্র জীবের৷ ধন্যবাদ করোনা ভাইরাস!
৭. মানুষের কোন ক্ষমতাই নাই বা থাকলেও তা অকিঞ্চিতকর এ বোধের উন্মেষ ঘটাতে পেরেছে; যত মারণাস্ত্র তৈরি থাকুকনা কেন যত সম্পদের মালিক হওনা কেন যত চৌকশ গোয়েন্দা বাহিনী, সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী থাকনা কেন;  স্রষ্টার ক্ষমতার কাছে ওসবের কোন কাজ নেই৷ মানুষ বড় অসহায় ও দুর্বল৷ সার্বভৌম কেবল তাঁরই৷
৮. অশ্লীলতা, বেহায়াপনা থেকে ফিরাতে দারুণ পারঙ্গম করোনা;  শরীরের এক ইঞ্চি যায়গা উলঙ্গ রাখার সাহস ছেলে-মেয়ে কারোরই নেই৷ অপরিচিততো দূরের কথা আপনজনদের কাছেই আব্রু রক্ষায় দূরত্ব বজায় রাখতে সচেষ্ট৷ এতে নারীদের প্রতি সহিংসতা, অশালীন আচরণ বদলে যাবে৷ 
৯. রাজনৈতিক প্যাচাল কম, মিথ্যাচারের সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে পরষ্পর পরষ্পরকে সহায়তা করার প্রবণতা তৈরি করার জন্য করোনার করুণা প্রণিধানযোগ্য৷
১০. একা একা, জাতি-ধর্ম-বর্ণ, বিশেষে বেঁচে থাকার সুযোগ নেই বাঁচতে হলে বৈশ্বিক পরিবেশে সকলকে নিয়ে বাঁচতে হবে৷ করোনা বুঝিয়ে দিল মানব জাতি এক ও অবিচ্ছেদ্য৷ নিয়ন্তা এক  ও অনন্য৷ 
সবাই সতর্ক থাকুন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন আর স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন৷ দুর্যোগ মোকাবেলায় ধৈর্য ধারন করুন ৷