–এ,এন,এম এনায়েত উল্লাহ

করোনা আতঙ্কে সারা পৃথিবী নাকাল৷ উৎপত্তিস্থল চীনে প্রকোপ কমে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইরান এবং বিশেষ করে ইতালিতে করোনার আগ্রাসী অবস্থা দেখে আমাদের দেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সার্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিবেচনা করে মনে ভয় জাগে যে এত উন্নত দেশের এ বেহাল অবস্থা হলে আমাদের কী হবে? ইতালিতে করোনা এতো ছড়িয়ে পড়ার কারণ কি?
 গতকাল আমি এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে এবং আমার এক ইতালি প্রবাসী আত্মীয়র সাথে আলাপ করে তারই সারমর্ম এখানে তুলে ধরলাম বাংলাদেশের সক্ষমতার সাথে মিলিয়ে নেবেন৷
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার দুইশ ৬৬ জন। শুক্রবার নতুন করে আরও আড়াই হাজারের অধিক ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ১১২ জনে।
ইউরোপের আর দশটা দেশের তুলনায় ইতালিতে করোনা ভাইরাস মারাত্মকভাবে কেন ছড়াল, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৩৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি ভাইরাস নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় লোম্বার্দির হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে গবেষক ও চিকিৎসকরা বলছেন, এর অনেক আগেই ইতালিতে ঢুকেছে করোনা ভাইরাস। ইতালির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান ফ্লাভিয়া রিকার্ডো জানান, কিছুদিন ধরে নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন তবে এই লোম্বার্দিতেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। মোট আক্রান্তের ৮৫ শতাংশই ইতালির উত্তরাঞ্চলের। আর করোনায় মৃত্যুর ৯২ শতাংশ ঘটনা এখানকার। তবে ইতালির ২০টি অঞ্চলের প্রতিটিতেই করোনা রোগী পাওয়া গেছে। ইতালির বেশিরভাগ শিল্পাঞ্চল এই উত্তরাঞ্চলেই অবস্থিত।
ইতালিতে করোনার এত দ্রুত ভাবে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দূষণকে অন্যতম কারণ ধরা হচ্ছে। ইউরোপের দূষিত ১০০ শহরের ২৪টি ইতালিতে। সে দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। বয়ষ্কদের এক দিকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম অন্যদিকে তাদের সারায়ে তোলার ব্যপারে পারিবারিক ও সরকারি ততপরতা কম৷ তাই  করোনাজনিত রোগে বয়স্কদের মৃত্যুহার বেশি। ইতালিতে  করোনায় মৃতদের গড় বয়স ৮১ বছর।’
তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ধরা পড়ার আগেই বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এত বেশি মানুষের মৃত্যুর পেছনে এটিও একটি কারণ।
 বুঝে ওঠার আগেই এটি চেইনের মতো নানা জায়গায় সংক্রমিত হয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত ৪২ হাজার রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তবে আরো বেশি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো নয়। ইতালির প্রবৃদ্ধির ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ব্যয় করা হয় স্বাস্থ্য খাতে। জার্মানি, ফ্রান্সসহ অন্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় এটি অনেক কম। আর আমাদের দেশে এ খাতে বরাদ্দ বাজেটের ২.৯২% আর জিডিপির মাত্র ০ .৮৯ % ৷ মাথাপিছু বাসরিক বরাদ্দ ১৪৭৮ টাকা মাত্র ৷তা ছাড়া ইটালিতে  চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে প্রবাসীদের প্রতি অবহেলা বা কম গুরুত্ব দেওয়ার নজির অহরহ।
স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা খাতে ব্যয়সংকোচন ইতালির গুরুতর সমস্যা।  জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই সে দেশের। কোনো মহামারি হলে কী করতে হবে  তার কোনো পরিকল্পনা নেই। লোম্বার্দিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিছানা নেই। চিকিৎসকদের অর্থের ভিত্তিতে চিন্তা করতে হচ্ছে, কে সেবা পাবে আর কে পাবে না। এসবই মূলত প্রধান কারণ ইতালিতে কোরণার ভয়াবহ প্রকোপের।
পুরো ইতালিকে রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষনা করে।পুরো দেশ রেডজোনের আওতাভুক্ত ঘোষণা করার পর থেকেই গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ। দেশটির ব্যস্ততম শহর গুলো পরিণত হয়েছে ভুতুড়ে নগরীতে। পুরো দেশ যেন এক আতঙ্কের নগরী।
এদিকে দেশটির পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সাময়িকভাবে সকলপর্যায়ের কার্যক্রম সীমিত করা হয়েছে। শহরগুলোর সবখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আদালতের কার্যক্রম ৩১ মে পর্যন্ত স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছে।
ট্যুরিস্ট এলাকাগুলো একেবারে ফাঁকা। হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব ব্যবসায় ধস নেমেছে। অসংখ্য প্রবাসী বাংলাদেশি বেকার হয়ে পড়ছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রেস্টুরেন্ট,  প্রায় বেশির ভাগই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
রোমের বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল কার্যক্রম গত মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত স্থগিত থাকবে।
তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত না হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ ইতালির বিভিন্ন শহরে প্রায় ২ লাখ প্রবাসী বসবাস করছেন।
অনেক প্রবাসী আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফিরে আসছে তাদের ইচ্ছা মরলে দেশের মাটিতেই যেন মরণ হয় অন্ততঃ আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্যে মরতে পারবে! বিষয়টি আবেগের যায়গা থেকে বলা হচ্ছে কিন্তু এতে নিজের এবং প্রাণপ্রিয় পরিবারের সদস্য যাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বছরের পর বছর বিদেশে জীবন যাপন করছেন তাদের জীবনও  ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছেন৷ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ ফেরতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন৷ আল্লাহ ভালো জানেন সামনে কী অপেক্ষা করছে৷ এ  মুহুর্তে সবাই সচেতন হলে আশাকরি এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাব৷ আল্লাহ সবাইকে ভাল রাখুক৷