মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ ২৯ ফেব্রুয়ারি
মানিকগঞ্জে সিঙ্গাইরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা লাশের পরিচয় উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘটনার ১০ দিনের মধ্যে খুনের রহস্য উন্মোচনসহ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার মানিকগঞ্জে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দেন একমাত্র আসামি ইমরান হোসেন (২১)। তিনি সিঙ্গাইর উপজেলার চর গোলড়া গ্রামের জামাল মোল্লার ছেলে। হত্যাকান্ডের শিকার তরুণ হলেন সদর উপজেলার লেমুবাড়ি গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে উত্তম আকাশ ওরফে আলিফ (২০)।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সকালে জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চর গোলড়া গ্রামে একটি খেতের মধ্যে আগুনে পোড়া এক তরুণের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। তবে সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া লাশের পরিচয় প্রাথমিক অবস্থায় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় হত্যা মামলা করেন। এর পর ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করতে থাকে পুলিশ।
মামলার তদন্তকর্মকর্তা সিঙ্গাইর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন জানান, হত্যাকান্ডের ১০ দিনের মধ্যে গত শুক্রবার সকালে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঢাকার সূত্রাপুর থেকে এই হত্যাকান্ডের একমাত্র আসামি ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল শনিবার তাঁকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালতের বিচারক শাকিল আহম্মেদের কাছে আসামী ইমরান ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার বিস্তারিত জানান।
এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, বাবা-মা ঢাকায় থাকায় আলিফ সিঙ্গাইরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে দাদির কাছে থাকতেন। ছোটবেলা থেকে আলিফ ও ইমরান একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। পরবর্তীতে তাঁরা ইয়াবায় আসক্তি হয়ে পড়েন। মাদকসেবনের টাকা-পয়সা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। কয়েক মাস আগে আলিফ ঢাকার মিরপুরে থাকাবস্থায় ইমরানকে সেখানে ফোন করে ঢেকে নিয়ে যান। সেখানে ইয়াবাসেবন নিয়ে ইমরানকে মারধর করা হয়। এ নিয়ে আলিফের সঙ্গে ইমরানের দূরত্ব তৈরি হয়। এর পর এলাকায় আসলে আলিফ অন্য বন্ধুদের সঙ্গে চলাফেরা ও ইয়াবাসেবন করতেন। এ নিয়ে আলিফের প্রতি ইমরানের ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়। এসব বিষয় নিয়ে আলিফকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ইমরান।
আদালতে জবানবন্দিতে আলিফ জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ি গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মুঠোফোনে কল করে স্বর্নে দোকানের চুরি করার জন্য আলিফকে বাড়িতে ডেকে নেন তিনি। তাঁরা একসঙ্গে রাতের খাবারও খান। রাত ১২ টার দিকে পাশের চর গোলড়া গ্রামে আলিফকে নিয়ে যান ইমরান। এর পর ইমরান প্যান্টের কাপড়ের বেল্ট দিয়ে আলিফকে গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার করেন। পরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলের পাশে রাখা কেরোসিন ঢেলে লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়।