দাঙ্গাবিধ্বস্ত ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মঙ্গলবার মাঝরাত থেকে বহু মানুষের ‘রক্ষাকর্তা’ হয়ে উঠেছিলেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর। তবে এবার গতকাল বুধবার মাঝরাতেই কলেজিয়ামের সুপারিশ মেনে বিচারপতি মুরলীধরকে বদলি করে দিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বুধবার মাঝরাতে এই সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। বুধবার রাতে বদলি করা হয়েছে দিল্লির পাঁচ আইপিএস অফিসারকেও।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির মুস্তাফাবাদে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে বহু আহত স্থানীয় ছোট্ট আল হিন্দ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বহু চেষ্টা সত্ত্বেও তাঁদের এলাকার বাইরে এনে বড় হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি। পুলিশের থেকে কোনো সাহায্য না-পেয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার সময় বিচারপতি মুরলীধরের বাড়িতে যান চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মীরা। তাঁদের আবেদন শুনতে রাজি হন বিচারপতি মুরলীধর। রাত পৌনে ২টার সময় দিল্লি পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটা মানুষের কাছে পৌঁছে ভরসা তৈরির সময়।’’
বুধবার দিল্লির পরিস্থিতি নিয়ে মামলার শুনানির সময় সহিংসতায় ঘরছাড়া মানুষের জন্য উপযুক্ত আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।
দিল্লিতে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়ীক সংঘাতের মামলায় বুধবার কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং দিল্লি পুলিশকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি এস মুরলীধর। এর পরেই তাঁকে পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির আদেশটি চূড়ান্ত করা হয়।
তবে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধরকে গত সপ্তাহেই পঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টে বদলির সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। সেই বদলির প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করে দিল্লি হাইকোর্টের আইনজীবীরা। দিল্লি হাইকোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন ‘দ্ব্যর্থহীন এবং যথাসম্ভব কড়া ভাষায়’ বদলির সিদ্ধান্তের নিন্দা করে বলে, এর ফলে প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বিচারপতি মুরলীধরের বদলির উদ্যোগ এর আগেও দু’বার নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮-র ডিসেম্বর ও ২০১৯-এর জানুয়ারিতে। দু’বারই রাজি হয়নি কলেজিয়াম। দিল্লি হাইকোর্টের বহু আইনজীবীরই মতে, বিচারপতি মুরলীধর অত্যন্ত দক্ষ এবং বহু মামলাতেই সাহসী রায় দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ৮৪-র শিখ-বিরোধী দাঙ্গা মামলা এবং সমকামিতাকে ফৌজদারি অপরাধের তকমা থেকে মুক্ত করার রায়। তবে এবার মধ্যরাতেই বদলি হতে হলো তাঁকে। সূত্র : আনন্দবাজার।