মানিকগঞ্জের বরংগাইল-ঘিওর- দৌলতপুর ভায়া টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কসহ
কয়েকটি সড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুই পাশে জঙ্গলের কারণে চলাচল
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই তৈরি হয় ভুতুড়ে পরিবেশ। ঝোপঝাড়ে
যান চলাচলসহ পথচারী চলাচল অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। অজানা আতঙ্কে রাতে চলাচল
করেন মানুষজন। পুলিশ বলছে, ব্যস্ততম সড়কের দুপাশে ঘন ঝোপ ঝাড়ের কারনে
রাতে ঘটতে পারে চুরি, ছিনতাইসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড। এছাড়াও
জঙ্গলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটের পর রাস্তার
এসব জঙ্গলে অচেতন অবস্থায় ফেলা রাখার মতো ঘটনা ঘটছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ
নিয়মিত ওইসব জঙ্গল পরিষ্কার করে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঘিওর – দৌলতপুর আঞ্চলিক সড়কের ঘিওর নতুন
ব্রীজ এলাকা থেকে নিলুয়া বিল পর্যন্ত, বরংগাইল ঘিওর সড়কের চার কিলোমিটার,
বানিয়াজুরী- কেল্লাই সড়ক, ঢাকা আরিচা মহাসড়কের জোকা থেকে শোলধারা,
পখিুরিয়া থেকে বাষ্টিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত এবং বানিয়াজুরী- ঘিওর সড়কের
তিনটি স্পটে পাকা রাস্তার দুইপাশে জঙ্গলে পরিপূর্ণ। পাকা রাস্তার প্রস্থ
৮ থেকে ১৮ ফিট এবং রাস্তার দু’পাশের মাটির প্রস্থ প্রায় দুই/তিন ফিট করে।
পাকা রাস্তার নিচের মাটিতে প্রায় ৩/৪ ফিট উঁচু হয়ে বেড়ার মতো করে
ঝিটকানি, আটিশ্বর, বিধি, এলাং, বুমবরই, বরই, বিছাতু এবং বাইনা জাতীয়
আগাছায় পরিপূর্ণ।
জঙ্গলের কারণে পাশাপাশি বড় দুটি গাড়ি চলাচলের সময় ভ্যান, মোটরসাইকেল ও
সাইকেল আরোহীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশ কাটতে গিয়ে দূর্ঘটনায় পতিত হতে
হয়। এছাড়া এসব রাস্তায় প্রায় ট্রাক ও ভটভটি নষ্ট হয়ে রাস্তার অর্ধেক অংশ
জুড়ে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকে। ফলে তখন রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। পথচারীদের তখন
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পাশ কাটাতে হয়। পাশ কাটার সময় যখন আবার বড়
ধরনের গাড়ি চলে আসে তখন দাঁড়ানোর কোনো জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে জঙ্গলের
মধ্যে ঢুকতে হয় এবং পাকা রাস্তার উপর দিয়েই পথচারীকে চলাচল করতে হয়। অনেক
সময় দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে।
ঘিওর সদরের বাসিন্দা মোঃ আলম বলেন, রাস্তার দুপাশে জঙ্গল থাকায় চোর,
ছিনতাইকারীরা ওৎ পেতে থাকতে পারে। তাই রাতে ভয়ে পথ চলতে হয়। কিছুদিন আগে
রাস্তার পাশের জঙ্গলে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পরা জনৈক ব্যক্তিকে ফেলে
রেখে যায়।
রিকশা চালক জসীম মিয়া বলেন, বড় কোনো গাড়ি আসলে মানুষ মাটিতে দাঁড়ানোর
জায়গা পায় না। বাধ্য হয়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। গত মাস খানেক আগে
দূর্ঘটনায় আমার একটি পা ভেঙে যায়।
মাইলাঘী গ্রামের মোঃ রাকিব হোসেন বলেন, দ্রুত গতিতে সরু সড়কে বাস-ট্রাক
চলে, তখন ছোট যানবাহনগুলোকে রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকতে হয়। গত
কয়েকদিন আগে ভ্যানে ডিম নেযার সময় এক ডিম বিক্রেতা বাসের ধাক্কার ভয়ে
জঙ্গলে মধ্যে ঢুকে পাশের খাদে পড়ে যায়। এতে তার ২০ খাচি (৬০০ পিচ) মতো
ডিম ভেঙে গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘিওর উপজেলার এক জনপ্রতিনিধি বলেন, গত ২/৩ বছর
হলো রাস্তার দুপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করা হয় না। জঙ্গলের কারণে প্রায়
ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে জঙ্গল পরিষ্কার করার
নিয়ম থাকলেও তারা করে না বলে অভিযোগ করেন তিনি। ভিলেজ লাইন পরিবহনের
বাসচালক মো: লোকমান বলেন, জঙ্গলের কারণ রাস্তার মাপ বোঝা যায় না।
বিপরীতমুখি দুই গাড়ি আসলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটার উপক্রম হয়। এছাড়া প্রায়
গাড়ি নষ্ট হয়ে রাস্তার বেশিভাগ জায়গা জুড়ে পড়ে থাকে। তখন চলাচল করতে আরো
সমস্যা হয়।
ঘিওর থানার ওসি মোঃ আমিনুর রহমান বলেন, ব্যস্ততম সড়কের দুপাশে ঘন ঝোপ
ঝাড়ের কারনে রাতে নারী, ব্যবসায়ীসহ সাধারন পথচারীরা ভয়ে চলাচল করেন। যে
কোন সময় ঘটতে পারে চুরি, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা, ছিনতাইসহ নানা ধরনের
অপরাধ কর্মকান্ড। তাই সংশ্লিষ্ট দফতরের এসব জঙ্গল পরিষ্কার করা জরুরি।
মানিকগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ আনিসুর রহমান
বলেন, প্রতি বছর বর্ষার আগে এবং পরে সড়কের দুপাশের ঝোপ ঝাড় পরিষ্কার করা
হয়। কিন্তু বৃষ্টি ও এই মৌসুমে জঙ্গলগুলো দ্রুত জন্মায়। জঙ্গল পরিষ্কার
করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে ইনশাল্লাহ আগামী সপ্তাহখানেকের ভিতর এসব
জঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যাবে।