লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ॥ ৯ আগস্ট
প্রেমিকের সাথে দৈহিক সম্পর্কে অন্ত:সত্তা উপজাতি ত্রিপুরা তরুনী প্রয়োজনে ধর্মান্তরিত হবেন, তবু চাচ্ছেন স্ত্রীর স্বীকৃতি। আর ওই তরুনীর বাবা চাচ্ছেন ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ি দুইটি শুকরসহ বিশ হাজার টাকা জরিমানা। যে শুকর ও টাকায় উৎসব করে মেয়ের সম্ভ্রমহানির গ্লানি মূছে পবিত্র হবেন পাড়ার বাসিন্দারা। তবে এর কোনটিতেই রাজিনন প্রেমিক আলী হায়দার প্রকাশ সাগর ও তার মা লামা পৌর সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাকেরা বেগম।
২১ বছর বয়সী ঐ তরুনীর সঙ্গে বিবাহ বর্হিভুত সম্পর্কে অন্ত:সত্তা হওয়ার খবর জনসম্মুখে আসতেই মা কাউন্সিলর সাকেরা ছেলেকে আত্মগোপনে পাঠিয়ে গর্ভপাত ঘটাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। স্থানীয় কিছু নেতাকে ব্যবহার করে ঐ তরুনীকে এলাকা ছাড়া করার প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ সাকেরার বিরুদ্ধে।
এদিকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি আজহা ত্রিপুরা জানান, এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরপরই ওই মেয়ের মা-বাবা’সহ পুরো পরিবারকে সমাজচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানরকার পাড়াবাসি। তিনি বলেন, ত্রিপুরা সমাজে কোনো মেয়ে বিয়ে বর্হিভুত যৌন সম্পর্ক হলে সমাজের আইন অনুযায়ি পাড়া পবিত্র করতে ধর্ষক দুইটি শুকর ও মদকেনার প্রয়োজনীয় টাকা জরিমানা দিতে হয়। না হলে ওই মেয়েকে পাড়ায় আর ঢুকতে দেয়া হয় না। এবং তার মা-বাবা’সহ পুরো পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়।
লামার র্দূগম পাহাড়ের বাসিন্দা প্রায় চার মাসের অন্ত:সত্তা এই তরুনীর ভাষ্য, এনজিওতে চাকরির সুবাদে লামা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় কাউন্সিলর সাকেরা বেগমের বাসায় কয়েক বছর ধরে ভাড়া থাকেন তরুনীর পরিবার। আর এই সময়ে ওই ভাড়াবাসার মালিক কাউন্সিলর সাকেরা বেগমের ছেলে সাগর তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে তাদের সেই সম্পর্ক বিছানায় গড়ায়। এরমধ্যে একাধিকবার অন্ত:সত্তা হয়ে সাগরের কথায় ওষুধ খেয়ে গর্ভপাত ঘটান তিনি। তবে এবার অন্ত:সত্তা হওয়ার পর আগের মতো গর্ভপাতের জন্য চাপ দিতেই বেঁকে বসেন এই তরুনী। পরে তা লোক জানাজানি হয়ে ঘটনা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
ওই তরুনীর অভিযোগ, একদিকে বিয়ে করছি করবো বলে কালক্ষেপন অন্যদিকে সুযোগ পেলেই ধর্ষন করে সাগর। এই বিষয়টি তার মাকে ও জানানো হয়েছে কয়েকবার। তবে এবারের অন্ত:সত্তা হওয়ার খবরটি জানাজানি হতেই তার মা গত ক’দিন আগে ছেলেকে তড়িঘড়ি করে আত্মগোপনে পাঠিয়ে ঘটনা টাকা দিয়ে সমাধাণের চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগী ওই তরুনীর বাবা জানান, তার মেয়ের অন্ত:সত্তার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরপরই কিছু যুবক দিয়ে তাকে ওই ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপরই সে থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় চায়। তবে থানায় আইনের আশ্রয়ের পরিবর্তে উল্টো হুমকী নেমে আসে তার জীবনে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কিছু নেতার কথামতো তার কোনো কথা না শুনেই তাকে থানা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে সে জেলা নারী ও শিশু অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করার প্রস্তুতি নিতেই সাগরের সাথে তাকে বিয়ে দিয়ে মেনে নেওয়ার আশ্বাসে দমিয়ে রাখেন কাউন্সিলর সাকেরা ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী।
তিনি বলেন, অভিযুক্ত সাগেরর মা সাকেরা বেগমসহ স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত দেন কিছু টাকা নিয়ে গর্ভপাত ঘটিয়ে ঘটনা চেপে যেতে। তবে তার অন্ত:সত্তা কন্যা তাদের এ কথায় রাজি না হয়ে মামলার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় বাধ্যহয়ে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নেয়ার আশ্বাসে বাসায় নিয়ে যান কাউন্সিলর সাকেরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কাউন্সিলর সাকেরার এক স্বজন জানান, স্থানীয় পৌরসভার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিতায় সাকেরা ছেলে সাগরকে চলমান লকডাউনের পরই বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য সাগরের ভিসা প্রস্তুতির কাজও চলছে। সাকেরা ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েই উপজাতি অন্ত:সত্তা ঐ তরুনীকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করার ছক সম্পন্ন করছে বলেও তিনি জানান।
ছেলেকে আত্মগোনে পাঠিয়ে অন্ত:সত্তা তরুনীর গর্ভপাত ঘটানো এবং টাকা দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সাগরের মা কাউন্সিলর সাকেরা বেগমকে একাধিকবার ফোন করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের পুলিশ সুপার জেরিন আখতার বলেন, এই ধরণের কোনো ঘটনা জানা নেই। পুলিশ মামলা নিবে না কেন? থানায় গিয়ে মামলা করতে বলেন, যদি থানা মামলা নিতে না চায় সাথে সাথে আমাকে জানাতে বলেন।