আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় এক মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা ই নয়, আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাওয়া ওই কিশোরীর পরিবারের উপর চালানো হয় হামলা। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। শনিবার ভোরে ২৫০শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়েছে। দুপুর দেড়টার দিকে ওই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা কিশোরীর সাথে ঘটনাটি অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন। এরআগে শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার মনিয়ন্ধ ইউনিয়নের মনিয়ন্ধ গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরীর মা ও স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, কিশোরী মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা দিন মজুরের কাজ করেন। কিশোরীর মা আশপাশের বাড়িঘরে কাজ করে সামান্য কিছু আয়ের আশায়। মেয়েটি মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী হলেও স্কুলে পড়াশোনা করেন। স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। শুক্রবার পাশের একটি বাড়িতে ছোট একটি অনুষ্ঠান ছিল। কিশোরীকে একা ঘরে রেখে পাশের বাড়িতে যায় তার মা। সন্ধ্যার দিকে মাগরিবের আযান দিলে ওই কিশোরী ঘরের দরজা খুলে ওজু করতে যায়। এই সুযোগে পাশের বাড়ির বিল্লাল চৌধুরীর ছেলে হৃদয় (২৮) ঘরে ঢুকে যায়। কিশোরীটি ওজু করে ঘরে ঢোকার পর হৃদয় তাকে ঝাপটে ধরে। পরে ঘরে ঢুকে হৃদয়ের চাচাতো ভাই নোবেল চৌধুরীর ছেলে ইমরান (২১)। তারা দুইজন ওই কিশোরীকে ধর্ষনের চেষ্টায় ঝাপটাঝাপটি করে৷ এসময় সে বাধা দেওয়ায় তাকে মাটিতে ফেলে মারধর কিল-ঘুষি-লাথিসহ অমানবিক ভাবে মারধর করে। তাদের মারধরে কিশোরীটি চিৎকার শুরু করলে মেয়ের আত্মচিৎকারে পাশের বাড়িতে থাকা তার মা দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখেন ঘরের ভেতরে হৃদয় ও ইমরানকে। তাদেরকে ওই কিশোরীর মা ঘরে ঢোকার কারণ জিজ্ঞাস করলে দুইজন মিলে তাকেও মারধর করে পালিয়ে যান। রাতে মা-মেয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে চাইলে হৃদয় ও ইমরানের পরিবারের লোকজন তাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে অবরুদ্ধ করে ফেলে। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করে। শনিবার ভোরে কিশোরীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করা হয়। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক ফৌজিয়া জাফরিন টিকলী ওই কিশোরীকে পরীক্ষা শেষে বলেন, ‘এই কিশোরীর সাথে যা করা হয়েছে, তা কোন মানুষ করতে পারেন না। তার শরীরের বিভিন্ন স্থান জুড়ে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা সবকিছু লিখে রেখেছি। সে মানসিক ভাবে আরও ভেঙে পড়েছে। তার উপর দিয়ে একপ্রকার ঝড় গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তার সাথে জোরজবরদস্তি করা হয়েছে’। এই বিষয়ে আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোন লিখিত অভিযোগ পায়নি। পাইলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।