মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ ৭ আগস্ট। মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ দেওয়ানের ছেলে লালন দেওয়ান হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে তার পরিবারের সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শুক্রবার সকাল ১১ টায় মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি সঠিক সময় পদক্ষেপ নিলে লালন দেওয়ান হত্যাকান্ডের শিকার হতো না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন নিহত লালন দেওয়ানের ভাই হালিম দেওয়ান। এসময় মামলার বাদি লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম, মেয়ে তৃষা দেওয়ান ও ছেলে শিবাহ দেওয়ানসহ আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সিংগাইরে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রতিবেশী খন্দকার উজ্জ্বল বাঁশঝাড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইয়াবা লুকিয়ে রাখে। ওই মাদক খোয়া যাওয়াতে উজ্জ্বল লালনকে সন্দেহ করে। লালন দেওয়ান ওই মাদক সম্পর্কে কিছুই জানে না জানানোর পর, উজ্জ্বল মাদকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর জের ধরে গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে আসামী উজ্জ্বল , তার ভাই অনিক, করম আলী, ফাহিম, সোহান , আলী হোসেনসহ আরো ৪/৫ জন লালন দেওয়ানকে অপহরন করে নিয়ে যায়। পরে দিন ২৭ জনু পারিল খৈয়ামুড়ি এলাকায় লালনের লাশ উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় সিংগাইর থানায় মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত মুল আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত লালন দেওয়ানের মেয়ে তৃষা দেওয়ান অভিযোগ করেন, মাদক ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের সাথে এসআই মামুনের ভালো সর্ম্পক আছে। তার পিতাকে যেদিন অপহরন করা হয়েছিল ওই দিনই পুলিশের কাছে বিষয়টি বলার পর পুলিশ কোন গুরুত্ব দেয়নি। অনেক অনুনয় করার পর এসআই মামুন আসামী ফাহিমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন আসামী ফাহিম জানান, উজ্জ্বল খন্দকার তার বাবা লালন দেওয়ানকে নিয়ে গেছে। পুলিশ তাৎক্ষকি পদক্ষেপ নিলে তার বাবাকে জীবীত উদ্ধার করা সম্ভব ছিলো।

মামলার বাদি নিহত লালন দেওয়ানের স্ত্রী মমতাজ বেগম সংবাদ সম্মেলনে জানান, উজ্জ্বলের মাদক খোয়া যাওয়ার পর তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করে। উজ্জ্বল মেয়রের আত্মীয় হওয়ার কারণে বিষয়টি সিংগাইর পৌর মেয়র খোরশেদ আলম জয়কে জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন উজ্জ্বল মাদকের বিষয় নিয়ে কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করবেন না। কিন্তু তার স্বামীকে হত্যার পর মেয়র বলেছেন তিনি উজ্জ্বলকে এবিষয়ে কিছুই বলেননি। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, মেয়র খোরশেদ আলম জয় যদি সঠিক সময় উজ্জ্বলকে বলতেন তবে তার স্বামী হত্যাকান্ডের শিকার হতো না। এছাড়া হত্যাকান্ডের প্রায় দেড়মাস অতিক্রান্ত হলেও পুলিশ মুলআসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারেননি। আসামীর আত্মীয়স্বজনরা এখন প্রস্তাব দিচ্ছেন টাকা পয়সা নিয়ে আপোশ মিমাংশার জন্য। তিনি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃস্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।

বর্তমান দৌলতপুর থানায় কর্মস্থলে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন জানান, গত ২৬ জুন রাতে লালনের স্ত্রী ও স্বজনরা সিংগাইর থানায় এসে জানান ফাহিম দেখেছে লালনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। পরে ফাহিমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে ফাহিম জানান গাড়ীতে উজ্জ্বল খন্দকার ছিলো। এসময় তারা লালনকে ওই গাড়ীতে তুলে নিয়ে গেছে। তবে গাড়ীতে ডিবি না র‌্যাব ছিল তা ফাহিম জানাতে পারেনি। তাৎক্ষনিক জেলা ডিবি অফিসে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার সাথে ডিবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে লালনের স্বজনদের সাভার র‌্যাবের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছি। তিনি আরো বলেন উজ্জ্বলের সাথে তার যে সম্পর্কের অভিযোগ তুলেছে তা সত্য নয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংগাইর থানার উপপুলিশ পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম জানান, আলোচিত এই হত্যাকান্ডের পর এজারভুক্ত আসামী আলী হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়ার স্বীকারোক্তির পর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত জুয়েল, পিয়াল হাসান ও অপহরন কাজে ব্যবহৃত গাড়ীর চালক সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মুল আসামীসহ অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেস্টা চলছে।