মাদারীপুরে ১৬টি বানর হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এক গৃহবধূ। তিনি বলেছেন, বাড়ি-ঘরে বিরক্ত করায় বিষ দিয়ে এসব বানর হত্যা করেছেন তিনি।

শনিবার সদর উপজেলার চরমুগরিয়া এলাকায় ওইসব বানর হত্যায় অভিযোগে গ্রেপ্তার মধ্য খাগদী এলাকার লতু হাওলাদারের স্ত্রী শাহানা বেগম পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বানর হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মামলায় আসামি করে রোববার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।

পুলিশ জানায়, চরমুগরিয়া এলাকায় গত ৫ মে বিকেলে ১৬টি বানরকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে দুষ্কৃতিকারীরা। এই ঘটনার পর দিন জেলা বন বিভাগের পক্ষ থেকে তাপস কুমার সেনগুপ্ত বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে মাদারীপুর সদর থানায় বানর হত্যার অভিযোগ একটি মামলা  করেন।

এ ঘটনায় শনিবার গভীর রাতে সন্দেহজনকভাবে মাদারীপুর সদর উপজেলার মধ্য খাগদী এলাকার লতু হাওলাদারের স্ত্রী শাহানা বেগম ও তার দেবর আজিজ হাওলাদারের ছেলে আকু হাওলাদারকে আটক করা হয়। পরে পুলিশি হেফাজতে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় শাহানাজ বেগম খাবারের সাথে বিষ দেয়ার কথা স্বীকার করে এবং তাতেই বানর মারা গেছে বলেও জানান। তবে তার দেবর আকু হাওলাদার এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। শাহানা বেগমের বয়স ৫৫ বছর। তার স্বামী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা বলেন, ‘বানর হত্যার ঘটনায় সদর থানায় মামলা হলে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করি। এদের মধ্যে শাহানা বেগম নামে এক নারী বানর হত্যার কথা স্বীকার করেন। তিনি জানিয়েছেন- খাবারের সাথে বিষ দিয়েছিলেন বানরগুলোকে। এতেই বিষক্রিয়া হয়ে মারা গেছে বানরগুলো। তবে কোন ধরনের বিষ সেটা জানা সম্ভব হয়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে। তবে তার দেবর দোষী না হওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।’

সামাজিক বন বিভাগের বন সংরক্ষক তাপস কুমার সেনগুপ্ত বলেন, ‘ওই নারী দোষ স্বীকার করেছে। তিনি আরো বলেছেন- তিন মাস আগেও বিষ দিয়ে আরো ৮টি বানর মেরেছিল। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বিশ্বাস রাখি, এই তরতাজা প্রাণীগুলোর হত্যাকারীর সঠিক বিচার করা যাবে।

এই ঘটনায় অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার নাজীমকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি তিন কার্য-দিবসের মধ্যে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বদরুল আলম মোল্লা, জেলা প্রাণিসম্পদ র্কমর্কতা ডা. আবু বকর সিদ্দিক ও সহকারী বন সংরক্ষক তাপস কুমার সেনগুপ্ত।

প্রসঙ্গত, গত ৫ মে মঙ্গলবার বিকেলে মাদারীপুর পৌরসভার ৯নং ওর্য়াডের চরমুগরিয়ার মধ্যখাগদি এলাকায় খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে ১৬টি বানর হত্যা করে র্দুবৃত্তরা। এ ঘটনার পর দৈনিক জনমতে সংবাদ প্রকাশের পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সামাজিক বন বিভাগের র্কমর্কতা বানরের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য জেলা প্রাণি সম্পদ হাসপাতালে পাঠান।

এই ঘটনায় সদর মডেল থানায় ফৌজদারি এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেন মাদারীপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষণ তাপস কুমার সেন গুপ্ত।