প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আজ একটা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব স্থবির। সারা বিশ্বের মানুষ ঘরে বন্দি। লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক উন্নত দেশ এটি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের দেশেও এ ভাইরাসের আক্রমণ হয়েছে। জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। কে কীভাবে সংক্রমিত হবে তা বোঝা যাচ্ছে না- এটাই বড় চিন্তার বিষয়। মানুষ সুস্থ্যও হচ্ছে, মৃতের হারও কম। কিন্তু যাদের শরীরে নানা রোগ আছে তাদের জন্য এই ভাইরাস মারাত্মক।

তিনি বলেন, দুর্যোগ সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। যে নির্দেশনাগুলো দেওয়া হচ্ছে, দয়া করে সেগুলো মেনে চলুন। এটা মেনে চললে নিজে যেমন ভালো থাকবেন, অন্যরাও ভালো থাকবে। সবার বেঁচে থাকার অধিকার আছে। কেউ অকারণে ছোটোছুটি করবেন না। জাতির জনকের নেতৃত্বে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি। করোনাভাইরাস থেকেও আমরা দেশকে সুরক্ষিত করতে পারবো।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে জেলা পর্যায়ে ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে রোববার খুলনা ও বরিশাল বিভাগের আওতাধীন জেলাগুলোর প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সকাল ১০টায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এই ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন তিনি।

ভিডিও কনফারেন্সটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন ও সোস্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।

দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাও দেশবাসীকে বাঁচানোর জন্য সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছি। ঘরে থাকবেন। কারো সঙ্গে মেশামেশির দরকার নেই। প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ার দরকার নেই। আমি জানি কষ্ট হচ্ছে। তারপরও কষ্ট মেনে নিয়েই সবাইকে ঘরে থাকতে হবে।  নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে হবে। সবাই মাস্ক ব্যবহার করবেন। চোখে-মুখে হাত দেবেন না। 

বাংলা নববর্ষ ঘরে বসে পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নববর্ষ পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরে বসে পালন করুন। কোথাও যেন লোক সমাগম না হয়। মানুষের সাথে মানুষের সংস্পর্শ যতই কমানো যায় ততোই ভালো। উৎপাদিত কৃষি পণ্য আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রামে হাট বাজার বসলেও অনেক মানুষের যেন ভিড় না হয়। দিন মজুররা যাতে ধান কাটতে পারে সেই ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। যারা কাজ করতে পারছেন না কিংবা কারো কাছে চাইতেও পারছেন না, তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের কাছে খাদ্যের অভাব নেই, যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে। পাশাপাশি খাদ্যের আবাদ বাড়াতে হবে। একখণ্ড জমিও যেন খালি না থাকে।

ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য বিশেষ প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে। তবে আমরা বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা সব ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিচ্ছি।  কৃষি অব্যাহত রাখতে হবে, খাদ্যটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিছুদিন পর বোরো ধান উঠবে, কৃষক যেন ন্যায্য দাম পায়। কৃষির জন্য ২০০ কোটি প্রণোদনা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ১৫০ কোটি টাকা, সারের ভর্তুকি বাবদ আগামী অর্থ বছরে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষকের জন্য ৫ কোটি টাকার প্রণোদনা ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার সুদের হার হবে মাত্র ৫ শতাংশ। কোনো মানুষ যাতে কষ্ট না পান, সেজন্য কৃষি খাতে আমরা ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিচ্ছি। এ দেশে মাটি আছে, মানুষ আছে। আমাদের মাটি অনেক উর্বর। আমরা নিজেদের চাহিদা পূরণ করে রপ্তানিও করতে পারি। কোনো জমি যেন খালি না থাকে, এ ছাড়া ছাদেও চাষ করতে পারেন।