জনমত ডেস্ক, ৭ এপ্রিল। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্টে মারা যান নারায়ণগঞ্জের সংগীতাঙ্গনের প্রিয়মুখ বেজ গিটারিস্ট খায়রুল আলম হিরু ওরফে রাকিব। মৃত্যুর পরপরই তার মরদেহ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে এনে ফেলে রাখা হয় রাস্তায়। সারারাত মরদেহের পাশে কেউ ছিল না। করোনা উপসর্গ নিয়ে সোমবার রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। 

দেড় বছরের ছেলে, স্ত্রী ও মাকে নিয়ে হিরু শহরের দেওভোগ কৃষ্ণচূড়া মোড় এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সঙ্গে হিরুর বোনও থাকতেন।নির্দিষ্ট কোন ব্যান্ডদলের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও হিরুদের একটি গ্রুপ ছিল। যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্টেজ শো করতেন।

জানা যায়, শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু রোগীর জ্বর-সর্দি এবং শ্বসকষ্ট রয়েছে এমনটা জানতে পেরে অ্যাম্বুলেন্স চালক গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে যন্ত্রণায় ছটফট করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে রাস্তায় মরদেহ পড়ে থাকার খবর পৌঁছায় সিটি করপোরেশনের কাছে। খবর পেয়ে প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা ঘটনাস্থলে ছুটে যান তার টিমসহ স্থানীয় থানা পুলিশ নিয়ে। তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় মরদেহ দাফনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

আফসানা আফরোজ বিভা জানিয়েছেন, গত ২৬ মার্চ থেকে তার জ্বর-সর্দি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়। পরে শহরের একজন চিকিৎসককে দেখালে বেশ কিছু পরীক্ষা করানো হয়। এতে তার ফুসফুসে পানি জমা ছিল বলে জানিয়ে তাকে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিয়ে ওষুধ খেতে বলেন। কিন্তু জ্বর, সর্দি আর শ্বাসকষ্ট না কমায় পরিবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে চিকৎসক তাকে ভর্তি না করে পুনরায় ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। 

এলাকাবাসীর একটি পক্ষ জানান, হিরুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তার পরিবার। কিন্তু এলাকাবাসী প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দিবে না এবং বের হতেও দিবে না জানিয়ে বাধা দেন।

তবে, এ অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একজন প্যানেল মেয়রও ছিলেন। আমি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সে হিরুকে উঠানো হচ্ছিলো। এরমধ্যে চালক ও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা অন্যরা বলছিলেন তিনি মারা গেছেন, তাকে আর ঢাকা নিয়ে কী হবে। এরপরই মরদেহ বাড়ির কাছে ফেলে রেখেছিল। করোনা আতঙ্কে কেউ আর কাছে যায়নি। পুলিশের উপস্থিতিতে তার মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশন।