করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে শিশুসহ একই পরিবারের পাঁচ সদস্যকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল। শনিবার রাতে প্রশাসনের নির্দেশে তাদের রংপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফরিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এখন তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। রক্ত-কফসহ অন্যান্য নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট আসার পর জানা যাবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।’

অন্যদিকে রংপুর মেডিকেল কলেজে করোনাভাইরাস শনাক্তে মেশিন এলেও এখন পর্যন্ত কিট এসে পৌঁছায়নি। তবে পিসিআর মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে পিসিআর মেশিনের কার্যক্রম শুরু হতে আরো কয়েকদিন লাগবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাড়ার বাসিন্দা ও ঢাকার রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী এবং তার পরিবারের চার সদস্যকে শনিবার সন্ধ্যায় প্রশাসনের নির্দেশে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে আনা হয়। ওই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ জানান, প্রাথমিকভাবে তাদের লক্ষণগুলো নিয়ে আইইডিসিআরের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের আইসিইউ সাপোর্ট দরকার হতে পারে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় তাদের রংপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।’ 

তিনি আরও জানান, আইইডিসিআরের একটি টিম গতকাল রবিবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।

চিলারং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী জানান, পরিবারের এক সদস্য করোনা পরিস্থিতির কারণে পাঁচদিন আগে ঢাকা থেকে সপরিবারে তার গ্রামের বাড়িতে এসেছে। ঢাকা থেকে আসার পর থেকেই তার জ্বর ও সর্দি। শনিবার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে সে নিজে হটলাইন নম্বরে ফোন করে। পরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের অনুরোধে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের একটি টিম বিশেষ সতর্কতায় ওই যুবকসহ তার পরিবারের পাঁচজনকে হাসপাতালে আনেন। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলেও চেয়ারম্যান জানান।

রংপুর মেড্যিাকল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে ওই রোগীদের ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. হিরম্ব কুমার রায় জানান, তাদের শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজে করোনাভাইরাস শনাক্তে পিসিআর মেশিন এলেও তা এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি। কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবরেটরির দুটি রুমে মেশিনটি স্থাপনের কাজ চলছে। এটি সম্পন্ন হলে এ অঞ্চলের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিংবা সন্দেহভাজনদের পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মেশিনটি ঢাকা থেকে আসার পর শুক্রবার দুপুর থেকেই কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ল্যাবরেটরির দুটি রুমে তা স্থাপনের কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে মেশিনটি পরিচালনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, পিসিআর মেশিনের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হলে রোগীর রক্ত, ঘাম ও কফ পরীক্ষা করা হবে। এজন্য মেডিক্যালে একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হতে আরও দু-একদিন লাগতে পারে বলেও জানান তিনি।

রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আমিন আহাম্মেদ জানান, রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন বিদেশফেরত আরও ১০৪ জন। এনিয়ে এই বিভাগে মোট এক হাজার ৭৬১ জন হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।