অনুবাদক- প্রকৌশলী এ,এন,এমএনায়েত উল্লাহ
বিষয়: করোনা বা কোভিড -১৯ ভাইরাস আসলে আমাদের কী শিক্ষা দিচ্ছে?
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আমাদের জন্য ভাল হউক বা মন্দ হউক ঘটে যাওয়া সমস্ত কিছুর পিছনে একটি আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্য রয়েছে৷
সত্যিকারার্থে, করোনা বা কোভিড -১৯ ভাইরাসটি আমাদের সাথে কী করছে আমি এ বিষয়ে গভীরভাবে ভেবে যা পাই তা আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই:
১) এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা, আর্থিক পরিস্থিতি বা খ্যাতি নির্বিশেষে আমরা সবাই সমান। এই রোগটি আমাদের সকলের প্রতি সমান আচরণ করে, সম্ভবত আমাদেরও তাই করা উচিত৷ আপনি যদি আমাকে বিশ্বাস না করেন, টম হ্যাঙ্কসকে জিজ্ঞাসা করুন।
২) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা সবাই সংযুক্ত এবং কোনকিছু একজনের উপর প্রভাব ফেললে তা অন্যের উপরও প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা যে মিথ্যা সীমান্ত তৈরি করে রেখেছি সেগুলির খুব বেশি মূল্য নেই কারণ এই ভাইরাসের সীমন্ত অতিক্রমে পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। এই দুনিয়াতে যারা পুরো জীবন নিপীড়ন করে কাটিয়েছে; অল্প সময়ের জন্য আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে এটি আমাদেরকে সেই নিপীড়নের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
৩) এটি আমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছে স্বাস্থ্য কত মূল্যবান এবং কীভাবে নোংরাভাবে উৎপাদিত খাবার এবং পানীয় খেয়ে যাচ্ছি, রাসায়নিকের পর রাসায়নিক মিশিয়ে পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার এবং পানীয় জল দুষিত করে খাওয়ার মাধ্যমে আমরা কীভাবে এটিকে অবহেলা করে চলছি। আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্যের যত্ন না নিই, তবে আমরা অবশ্যই অসুস্থ হয়ে পড়ব।
৪) এটি আমাদের ক্ষণকালীন জীবনের এবং আমাদের পক্ষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যা একে অপরকে সহায়তা করা, বিশেষত যারা বৃদ্ধ বা অসুস্থ। আমাদের উদ্দেশ্য টয়লেট রোল কেনা নয়৷
৫) এটি আমাদের সমাজ কী পরিমাণ বস্তুবাদী হয়ে উঠেছে এবং অসুবিধার সময় আমরা অনুধাবন করি আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি হচ্ছে খাদ্য, জল, ওষুধ, তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে; আমরা কখনও কখনও অযথা এর বিপরীতে বিলাসিতাকে মূল্য দেই৷
৬) এটি আমাদের পরিবার এবং গৃহজীবন কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং আমরা এটিকে কতটা অবহেলা করেছি তা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এটি আমাদের ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য করছে যাতে আমরা আমাদের গৃহজীবন পুনরায় তৈরি করতে পারি এবং আমাদের পারিবারিক ইউনিটকে শক্তিশালী করতে পারি।
৭) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা যা করছি এটি আমাদের আসল কাজ নয়, আমাদের আসল কাজ একে অপরকে দেখাশোনা করা, একে অপরকে রক্ষা করা এবং একে অপরের দ্বারা উপকৃত হওয়া।
৮) এটি মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের অহংবোধকে নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত৷ এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা নিজেদেরকে যতটা বড় মনে করি বা অন্যরা আমাদের কতটা মনে করে, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না একটি ভাইরাস আমাদের বিশ্বকে স্থবির করে তুলতে পারে।
৯) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে মুক্তির শক্তি আমাদের হাতে। পরষ্পরকে সহযোগিতা, সহায়তা করা, ভাগ করে নেওয়া, দেওয়া, এবং একে অপরকে সমর্থন করা বা স্বার্থপর হতে, গোপনে মওজুদ করতে, সেবা-যত্ন করতে যেকোনটা আমরা নিজেরাই বেছে নিতে পারি৷ প্রকৃতপক্ষে, ভাইরাস আমাদের আসল চেহারা প্রকাশ করে দিচ্ছে৷
১০)এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি, বা আমরা আতঙ্কিত হতে পারি। আমরা বুঝতে পারি যে এই ধরণের পরিস্থিতি ইতিহাসে আগে বহুবার হয়েছিল এবং শেষ হয়ে যাবে বা আমরা আতঙ্কিত হয়ে এটি বিশ্বের সমাপ্তি হিসাবে দেখতে পারি এবং ফলস্বরূপ, আমাদের ভালোর চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে।
১১) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এটি হতে পারে শেষ বা একটি নতুন সূচনা। এটি আমাদের ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নেয়ার অনুধাবন বা সুযোগ হতে পারে বা এটি এমন একটি চক্রের সূচনা হতে পারে যা চলতে থাকবে আমাদেরকে যে পাঠটি বোঝাতে চাইছে তা না বুঝা পর্যন্ত।
১২) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এই পৃথিবী অসুস্থ। এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এখন যত দ্রুত তাক থেকে টয়লেটরোলগুলি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, ততোধিক ক্ষিপ্রতায় বন উজাড় হওয়া বন্ধ করতে হবে৷ আমরা অসুস্থ কারণ আমাদের বাড়ি তথা পৃথিবী অসুস্থ৷
১৩) এটি আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে যে প্রতিটি অসুবিধার পর সর্বদা স্বস্তি আসে। জীবন চক্রীয়, এই মহান চক্রে এটি একটি পর্ব মাত্র। আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই; এটাও কেটে যাবে.
১৪) যেখানে অনেকে করোনা বা কোভিড -১৯ ভাইরাসকে একটি বিরাট বিপর্যয় হিসাবে দেখেন, আমি এটিকে দুর্দান্ত সংশোধক হিসাবে দেখতে পছন্দ করি৷ এটি যে গুরুত্বপূর্ণ পাঠগুলি আমরা ভুলে গিয়েছি বলে মনে হয়, তা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে এবং এখন আমরা সেগুলি থেকে শিখব কী শিখব না তা আমাদের বিবেচনা।