-এ,এন,এম এনায়েত উল্লাহ

করোনা ভাইরাসের অন্যতম একটি উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। কিন্তু জ্বর হলেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না-করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠী। তার মতে, অতিরিক্ত পরীক্ষা ভবিষ্যতে বিপদ বাড়াবে। কেননা চাহিদার তুলনায় করোনা পরীক্ষার কিট অপ্রতুল।
ডা. দেবী শেঠীর মতে, “যদি কারও ফ্লু বা সর্দি থাকে, প্রথমে নিজেকে আইসোলেশন করে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রথম দিন শুধু ক্লান্তি আসবে। তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভব হবে। সঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা হবে। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথায় যন্ত্রণা হবে। পেটের সমস্যাও হতে পারে। ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথার যন্ত্রণা কমতে থাকবে। তবে পেটের সমস্যা থেকেই যাবে। অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। এর অর্থ আপনার প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনা-আশঙ্কা নেই।”
এই চিকিৎসক বলেছেন, ‘এসব ক্ষেত্রে আপনার করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। কারণ শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। তবে যদি অষ্টম বা নবম দিনে আপনার শরীর আরও খারাপ হয়, করোনা-হেল্পলাইনে ফোন করে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।”
বিশ্বব্যাপী মহাবিপর্যয় নামিয়ে এনেছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এরই মধ্যে বিশ্বের ১৮৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৫৫ হাজারের বেশী  মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৭৯১ জনের। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে ভুগছে বিশ্ববাসী।
চীনের উহান প্রদেশ থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বের আট হাজার মানুষ মারা গেছে। হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। চীন থেকে ছড়ালেও শক্ত অবস্থান এবং সেখানে অবস্থানরত নাগরিকদরে সচেতনতার কারণে ইতোমধ্যেই স্বাভাবিক হতে চলেছে চীনের পরিস্থিতি। গত কয়েকদিনে মৃতের সংখ্যা যেমন কমেছে তেমনি কমেছে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও।
চীনের এই সুস্থ হয়ে ওঠা কোন প্রতিষেধকে নয়— বরং আটটি পরামর্শ মেনে চলায় তারা সফল হয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের লিয়াওংনিং প্রদেশের ডালিয়ান শহরে অবস্থান করা বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হাশিম রাব্বি। রাব্বির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, করোনার কোন প্রতিষেধক নেই। একমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করলেই এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে।
চীনা সরকার করোনা মোকাবেলায় আপনাদের কী কী করণীয় মেনে চলতে বলেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে হাশিম বলেন, করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। চীনা সরকার করোনা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। তাই তারা আজ সফল। আমাদেরকে আটটি পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। এগুলো আমাদের মেনে চলা আবশ্যকীয় ছিল। সেগুলো হল—
১. জ্বর. কাঁশি, সর্দি হলে তাৎক্ষণিক আপনাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
২. খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে যেতে মানা করেছে। সপ্তাহে ১ দিন বাজার করতে বলেছে।
৩. এলাকা ভিত্তিতে লকডাউন করা হয়। যাতে করে করোনায় আক্রান্ত মানুষ এক এলাকা থেকে অন্য কোথাও ঢুকতে না পারে।
৪. বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
৫. বাইরে থেকে এসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালভাবে হাত ধুতে বলা হয়েছিল।
৬. অযথা চোখে মুখে হাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছিল।
৭. মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে বলা হয়েছিল।
৮. নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া এবং ব্যায়াম করতে বলা হয়েছে।
হাশিম বলেন, বিশ্বের অত্যাধুনিক দেশগুলোর মধ্যে চীন অন্যতম। সেখানে এত সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও এত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। অথচ বাংলাদেশে করোনা নিয়ে এখনো জরুরি অবস্থাই ঘোষণা করা হয়নি। এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে, বিনা চিকিৎসার জন্য মৃতের পরিমাণ বাড়বে এছাড়া মানুষ হতাশার মাঝে পরে গেলে সামাজিক অবস্থা ধংসের মুখে পরবে।
হাশিম আরো বলেন, দীর্ঘ ২ মাস চীনে আছি এবং থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেশে অফিস গুলো বন্ধ করুন । এর ভয়াবহ পরিণতির বিষয় সম্পর্কে বিবেচনা করুণ । নিজে সচেতন হোন। নিজে না পারলে পরিবারের মানুষের কথা ভেবে হলেও বাইরে অযথা ঘোরাঘুরি থেকে দূরে থাকুন। কারণ সবথেকে ভালো উপায় হবে ভাইরাস সংক্রমণ থামানো।
প্রসঙ্গত, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর কথা জানায় জাতীয় রোগ তত্ত্ব ও গবেষণা ইন্সটিটিউট (আইইডিসিআর)। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ২০জন। তাদের মধ্যে মঙ্গলবার একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় আইইডিসিআর৷