পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমিতে পুকুর খনন করায় খনন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) গত দুইদিনে পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে অন্তত ৬টি পুকুর খনন বন্ধ করে দেন। খননকৃত এসব পুকুরের মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় যাচ্ছিল। খনন বন্ধ হওয়ায় এসব এলাকার ফসলি জমি ও পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেল। এতে এলাকার কৃষকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, ভাঙ্গুড়া পৌরসভার জগতলা মহল্লায় গোলাম রসূল, পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের টলটলিয়া পাড়া গ্রামে লিটন আহমেদ, রাঙ্গালিয়া গ্রামের রাজু আহমেদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন এবং খানমরিচ ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ ও শ্রীপুর গ্রামের রুহুল আমিন গত সপ্তাহে তাদের ফসলি জমিতে পুকুর খনন কাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় আশেপাশের জমির মালিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কায় উপজেলা প্রশাসনের কাছে ফসলি জমি রক্ষার আবেদন করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাফিউল আলম খনন কাজ চলা এসব পুকুরে অভিযান চালিয়ে খনন কাজ বন্ধ করে দেন। এ সময় তারা একাধিক মাটি খনন যন্ত্র (এস্কেভেটর মেশিন) জব্দ করেন। কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্থান ত্যাগ করার পরে জমির মালিকরা আবারো খনন কাজ শুরু করেন। পরে বিষয়টি জেনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের (নায়েব) দিয়ে শুক্রবার আবারও অভিযান চালান। এরপর জমির মালিকরা খনন কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খনন কাজ বন্ধ হওয়া জমিগুলো পাকা সড়কের পাশে অবস্থিত। এসব জমিতে রবিশস্য সহ নানা জাতের ফসল আবাদ হতো। ফসল নষ্ট করে গত সপ্তাহে খনন কাজ শুরু করে জমির মালিকরা। এসব জমিতে পুকুর খনন হলে আশপাশের জমিতেও ফসল আবাদ হুমকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা অন্যান্য কৃষকদের।
এ সময় জমির মালিকরা দাবি করেন, ফসল আবাদের চেয়ে মাছ চাষে লাভ বেশি হওয়ায় তারা পুকুর খনন করছেন। এর আগে অন্যরা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করেছেন। কিন্তু প্রশাসন বাধা দেয়নি। তাই তারাও ফসলি জমিতে পুকুর খনন শুরু করেছিলেন। এখন প্রশাসন খনন বন্ধ করে দেওয়ায় জমিগুলো অকেজো হয়ে গেল।
খনন কাজ বন্ধ হওয়া জমির মালিক গোলাম রসূল বলেন, ‘ফসলি জমিতে পুকুর খনন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ তা জানা ছিল না। তাই পুকুর খনন শুরু করা হয়েছিল। এখন জমিগুলো কেটে একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল। জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে পুকুর খননের অনুমতি চাইব।’
উপজেলার টলটলিয়া পাড়া গ্রামের কৃষক রকিবুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই বিভিন্ন গ্রামে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খননের মহোৎসব শুরু হয়। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে। যা ভবিষ্যতের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ বছর উপজেলা প্রশাসনের পুকুর খনন বন্ধে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ফসলি জমি নষ্ট করে কোনো পুকুর করা যাবে না। সরকারি এমন নির্দেশনা উপেক্ষা করে কয়েকজন পুকুর খনন করতে শুরু করেছিল। তাই অভিযান চালিয়ে এসব পুকুর খনন কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এর সঙ্গে একাধিক খনন যন্ত্র জব্দ করা হয়েছে। এরপরও কেউ যদি পুনরায় খনন শুরু করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।