সপ্তাহ ব্যবধানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বস্তায় দেড় থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে চালের দাম। মানভেদে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা করে। সরবরাহ সঙ্কটকে দুষছেন মিলার ও পাইকারি বিক্রেতারা।

কৃষক বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, কম দামে ধান বিক্রি করে বেশি দরে চাল কিনতে হয় তাদের।

চালের দাম সহনশীল রাখতে বাজার তদারকি জোরদারের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে যে মোটা চালের কেজি ৩৫ টাকা ছিল, সেই চালই এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। তবে এই সময়ে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে দাবি করছেন আড়তদাররা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের সরবরাহ কম থাকায় মূল্য বেশি।

ক্রেতারা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাবেই ব্যবসায়ীরা যখন-তখন চালের মূল্য বাড়াচ্ছেন।

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় গত দুই দিনে চালের মূল্য বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা। মোটা চালের তুলনায় সরু চালের মূল্য বেড়েছে বেশি।

বিভিন্ন বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।

প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকায়। গত সপ্তাহে এই চালের মূল্য ছিল ৫০ থেকে ৫২ টাকা।

হঠাৎ মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার চাল বিক্রেতা ফজলুর রহমান বলেন, ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে গত সপ্তাহে রাজধানীতে চালের সব ট্রাক আসতে পারেনি। এতে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, তাই চালের মূল্য বেড়েছে।

বনশ্রী মামুন রাইস এজেন্সির আড়তদার মামুন হোসেন বলেন, ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে রাস্তায় সব ট্রাকচালক নামতে চান না। যারা আসতে চান তারা বেশি ভাড়া হাঁকেন। ব্যবসা চালিয়ে রাখতে বেশি ভাড়া দিয়ে চাল এনেছি। তাই বেশি মূল্যে চাল বিক্রি করছি।

বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, আড়তে কোনও চালের মূল্য বাড়েনি। এই সময় চালের মূল্য বাড়ারও কোন কারণ নেই। নতুন চাল উঠছে। কাজেই খুচরা বাজারে যদি চালের মূল্য বেড়ে যায়, তা অন্য কোনও কারণে হতে পারে। সরবরাহে কোন সমস্যা নেই।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, চালের মোকাম নওগাঁ, নাটোর, জয়পুরহাট, দিনাজপুরে তো চালের মূল্য কম। এখানে সরবরাহ বা জোগানেও কোন সমস্যা নেই। এরপরও যদি রাজধানীর খুচরা বাজারে মূল্য বেড়ে যায়, তাহলে এর দায় আমরা নিতে পারব না। 

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে মোটা বা সরু কোনও ধরনের চালের মূল্য বাড়ার কারণ নেই।

নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হয় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ। এ সময় খুচরা বাজারে প্রকারভেদে চালের দাম বেড়ে যায় ৩ থেকে ৮ টাকা। মাঝের সময়টুকু একই থাকলে সম্প্রতি আবারও বেড়েছে দাম।

দিনাজপুরে সপ্তাহখানেক আগে প্রতিবস্তা মিনিকেট বিক্রি হতো ১৯০০ টাকায়। এখন বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০ টাকায়। ২৮ জাতের ধান ১৭০০ টাকা বস্তা থেকে বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ টাকা।

নাটোরেও পাইকারির পাশাপাশি খুচরা বাজারে রকমভেদে চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা বেশি কেজিতে।

মিলাররা বলছেন, শীতে ধানের চাতাল থেকে চাল তৈরিতে সময় লাগে বেশি। এতে বাজারে ঘাটতি তৈরি হওয়ায় সরু চালের দাম কিছুটা বাড়ে। বৈশাখে নতুন ধান উঠলে দাম কমে আসবে বলছেন বিক্রেতারা।

চালের দাম বাড়ার পক্ষে সাফাই জানিয়েছেন বাজার কর্মকর্তারা। এতে কৃষকরাও লাভবান হবে মতো তাদের।