মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
মানিকগঞ্জের ঘিওরে স্টিকার লাগিয়ে অটোরিকশায় চাঁদাবাজি বন্ধে চালক ও মালিকরা প্রতিবাদলিপি পেশ করেছে উপজেলা প্রশাসনের কাছে। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন, ঘিওর অটোবাইক সমিতির সকল কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ প্রদান করেছেন। বাংলাদেশ অটো বাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটি নামে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের বিরুদ্ধে, অবৈধভাবে চাঁদা আদায় বন্ধে রবিবার সন্ধ্যায় নিবার্হী অফিসার বরাবর লিখিত আবেদন করে চালক ও মালিকগন। চালক মালিকদের অভিযোগ, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তার গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ও চালক মারধরের শিকার হচ্ছে।
উল্লেখ্য ঘিওরের কয়েকটি রুটে প্রতিদিন তিন শতাধিক অটোবাইক চলাচল করে। প্রতিদিন বেপরোয়া চাঁদাবাজির শিকার হন অটোবাইক চালক মালিকগণ।
জানা গেছে, ঘিওর বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে বানিয়াজুরি, বড়টিয়া, সিংজুরি, পয়লা, বালিয়াখোড়াসহ ছয়টি রুটে প্রতিদিন গড়ে তিন শতাধিক অটোবাইক চলাচল করে। অটোবাইকের মালিক ও চালকদের অভিযোগ, ঘিওর বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোবাইক শ্রমিক কল্যাণ সোসাইটি নামে রশিদ দিয়ে প্রতিটি অটোবাইক থেকে ১৫ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়াও সমিতির স্টিকার লাগিয়ে মাসে চারশ টাকা আদায় করা হচ্ছে। মাসিক চাঁদা পরিশোধ করার পরেই গাড়িতে স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্টিকার না লাগানো থাকলে সেই গাড়ি চলতে দেয়া হয় না। ১১ সদস্যের একটি কমিটি থাকলেও পুরো চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে সভাপতি মো. নাজমুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক আংটি মানিক খা, শাহিন, সিদ্দিক, রবি, নাছিম ব্যাপারী,ইদ্রিস।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার সহযোগিতায় ঘিওরে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করলেও ভয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে সংঘবদ্ধ চক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে এরা কেউ অটোবাইকের মালিক বা শ্রমিক নন।
অটোবাইক মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক জুলুম করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাদের কমিটিতে স্থানীয় লোকজন জড়িত থাকার দরুণ কেউ কিছু করতে সাহস পাচ্ছে না। তারা আরো বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়নের সনদ না থাকলে পরিবহন খাত থেকে চাঁদা আদায় করা যায় না। অথচ তারা জোরপূর্বক প্রতিদিন হুমকি ধামকি দিয়ে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করছে।
সমিতির সভাপতি মো. নাজমুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক আংটি মানিক খাঁ চাঁদা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, শ্রমিকদের কল্যাণে প্রতিটি অটোবাইক থেকে ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। আর পাঁচ টাকা সুপারভাইজারদের বেতন হিসেবে আদায় করা হচ্ছে। তবে কমিটিতে স্থান না পেয়ে একটি পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে ১৫ টাকা করে চাঁদা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। মাসিক চারশ টাকা পাওয়ার পরে অটোবাইকের সামনের কাচে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে সমিতির টোকেন। যে বাইকে টোকেন নেই, সেই গাড়ি সড়কে চলতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক শ্রমিক গাড়ি চালাতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বহু কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে অন্য পেশার দিকেও ধাবিত হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ঘিওর থানার ওসি মো. আশরাফুল আলম জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগটি শুনেছি। অটোবাইক চালক-মালিকরা দুটি গ্রুপে বিভক্ত। আজ সোমবার আমি দুই গ্রুপের নেতাদের ডেকে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর হুশিয়ার করে দিয়েছি। চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার আইরিন আক্তার বলেন, অটোবাইক চালক-মালিকদের অভিযোগ পাওয়ার পর অটো বাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটি নামের সংগঠনটির কার্য্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
এদিকে অটো বাইক শ্রমিক কল্যান সোসাইটির আওতাভুক্ত চালক-মালিকদের দুই গ্রুপের মাঝে বিরাজ করছে উত্তেজনা। সিরিয়াল লেখা নিয়ে রুবেল ও রফিক নামে দুই ব্যক্তিকে মারধোরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এব্যাপারে ভুক্তভূগী শ্রমীকরা সোমবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সামনে অবস্থান নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।