আমেরিকার সন্ত্রাসী হামলায় গত শুক্রবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস্ ব্রিগেডের কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং ইরাকের হাশদ আশ শাবি’র সেকেন্ড ইন কমান্ড আবু মাহদি আল মুহানদিস শহীদ। কিন্তু আমেরিকার এ অপরাধযজ্ঞের ফল কি দাঁড়াবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
প্রথমত, এ ঘটনায় ইরানের অভ্যন্তরে ঐক্য ও সংহতি জোরদার হয়েছে। ইরানের জনগণ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব, বীর, দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে পরম শ্রদ্ধেয় মানুষ ও অসাধারণ সমরনেতা হিসেবে জানতেন। এ কারণে ইরানের সর্বস্তরের মানুষ ও নেতারা জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যার মার্কিন পদক্ষেপকে অপরাধযজ্ঞ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
মার্কিন অপরাধযজ্ঞের দ্বিতীয় ফলাফল হচ্ছে, এ ঘটনায় ইরান ও ইরাকের মধ্যকার ঐক্য আরো বেশি জোরদার হয়েছে। আমেরিকা গত দুই মাসে ইরান ও ইরাকের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু শহীদ সোলাইমানি ও আবু মাহদি আল মুহানদিসের জানাজা অনুষ্ঠানে এতো বিপুল সংখ্যক ইরাকির অংশগ্রহণ থেকে বোঝা যায় ওই দুই শহীদের রক্ত তেহরান ও বাগদাদকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।
মার্কিন অপরাধযজ্ঞের তৃতীয় ফলাফল হচ্ছে, আমেরিকার প্রতি ইরাকের জনগণের ক্ষোভ ও ঘৃণা বহুগুণে বেড়ে গেল। শহীদদের জানাজা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ইরাকিরা সম্মিলিতভাবে ‘আমেরিকা নিপাত’ যাক বলে শ্লোগান দিয়ে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। তারা অবিলম্বে মার্কিন সেনাদেরকে ইরাক ছাড়ার আহ্বান জানায়।
মার্কিন অপরাধযজ্ঞের চতুর্থ ফলাফল হচ্ছে, আমেরিকার ব্যাপারে ইরানের জনগণের চিন্তাভাবনায়ও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এ ব্যাপারে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়েরভান্দ আব্রাহামিয়ান বলেছেন, ইরানিরা এখন পর্যন্ত আমেরিকাকে ষড়যন্ত্রকারী সরকার হিসেবে চিনতো কিন্তু জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যার পর আমেরিকাকে তারা সন্ত্রাসী সরকার হিসেবে চেনা শুরু করেছে।
মার্কিন অপরাধযজ্ঞের পঞ্চম ফলাফল হচ্ছে, আমেরিকার এ ন্যক্কারজনক পদক্ষেপের ফলে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ইসরাইল ও মার্কিন বিরোধী প্রতিরোধ সংগ্রামীদের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে।
সোলাইমানিকে হত্যা করে আমেরিকা এটাকে তাদের জন্য বিরাট বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছে। কারণ সোলাইমানি ছিলেন প্রতিরোধ শক্তির একজন গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী কমান্ডার। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ী জনাব সোলাইমানিকে প্রতিরোধ ফ্রন্টের আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকা ধারণা করেছিল এ অঞ্চলের প্রতিরোধ সংগ্রাম শুধু একজন ব্যক্তি নির্ভর। আর এখানেই আমেরিকা সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছে।
কারণ এ অঞ্চলের প্রতিরোধ সংগ্রামীরা প্রমাণ করেছে এই সংগ্রাম কেবল একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর নয়। যেমন, লেবাননের হিজবুল্লার সাবেক মহাসচিব সাইয়্যেদ আব্বাস মুসাভি শহীদ হওয়ার সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন যিনি কিনা আমেরিকা ও ইসরাইলের জন্য ত্রাস।
মার্কিন অপরাধযজ্ঞের ষষ্ঠ ফলাফল হচ্ছে, এ অপরাধযজ্ঞের পরিণতিতে ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদেরকে বহিষ্কারের সুযোগ তৈরি হবে। কারণ আমেরিকা ইরাকের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে ইরাক ও ইরানের জনপ্রিয় দুই সামরিক কমান্ডারকে শহীদ করেছে। এর আগে ইরাকের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সিস্তানি এক ফতোয় সেদেশে মার্কিন উপস্থিতিকে হারাম ঘোষণা দিয়েছিলেন।