পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবন ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বাধার মুখে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন তাঁরা। এ সময় অবরোধের কারণে সৃষ্ট যানজটে আটকে পড়া ব্যবসায়ী ‘বিরক্ত’ হয়ে এক শিক্ষার্থীর বুকে পিস্তল তাক করেন। এতে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই ব্যবসায়ীকে পিটুনি দেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে থানায় নিয়ে যায়।
আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে শাহবাগ মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ওই ব্যবসায়ীকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া দুজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, অবরোধের সময় ওই ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে চলে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাঁকে বাধা দেন। এ সময় তিনি গাড়ি থেকে নেমে পকেট থেকে পিস্তল বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র কপিল দেব বর্মণের বুকে তাক করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ হেলমেট পরিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে পুলিশের রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আজিমুল হক সাংবাদিকদের বলেন, পিস্তল তাক করে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়ার একটি মৌখিক অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। মারধরের ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। তাঁর গাড়ি থেকে একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। চিকিৎসার জন্য তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
শাহবাগ থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) জানান, গণপিটুনির শিকার ওই ব্যক্তির নাম আসিফ রশিদ খান। দুবাইপ্রবাসী এই ব্যক্তি পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর পিস্তল ও শর্টগান দুটি লাইসেন্স করা। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে গাড়িতে করে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন তিনি। অবরোধের কারণে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকায় বিরক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর গাড়িটি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করতে যান। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়ান তিনি। এর মধ্যেই তিনি পকেট থেকে পিস্তল বের করে এক শিক্ষার্থীর বুকে তাক করেন।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব সরস্বতীপূজা। এ কারণে ভোটের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ‘সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের’ ব্যানারে বিক্ষোভের পর বেলা দুইটার দিকে ইসি ভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা নিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা হন কয়েক শ শিক্ষার্থী। কিন্তু শাহবাগে পুলিশ তাঁদের বাধা দিলে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। প্রায় এক ঘণ্টা অবরোধের পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করে তাঁরা রাস্তা ছেড়ে দেন। এ ছাড়া একই দাবিতে ঢাকার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানান তাঁরা।